রাজধানীর শ্যামলীতে একটি হোটেলের পেছনে ছোট আকারের একটি বস্তু বস্তার ভেতরে। স্থানীয় এক কিশোর এলাকাবাসীকে জানান, সেখানে সন্দেহজনক কিছু একটি পড়ে আছে। এক কান দুই কান করে ছড়ায় সেখানে শিশুর মরদেহ আছে। আর তা থেকে রক্ত ঝরছে।
কথাটি যায় স্থানীয় একজনের কানে, যার স্বজন কাজ করেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে।
ওই ব্যক্তি তার আত্মীয়কে কল করে জানান, সেখানে হোটেলের পেছনে শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ পড়ে আছে। মুহূর্তেই সেই টেলিভিশনের স্ক্রলে চলে যায় খবরটি।
খবরটি পৌঁছায় শেরেবাংলা নগর থানাতেও। পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্কেলগুরুম। বস্তা খুলে পাওয়া যায় ফ্রিজের জং ধরা কমপ্রেসর।
যিনি শিশুর মরদেহ পড়ে থাকার কথা সাংবাদিককে জানিয়েছিলেন, তার বাসা শ্যামলীতেই। নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয়েছে তার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টা হচ্ছে, শোনা কথা। এলাকায় দেখি সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের কাছে শুনলাম বস্তাবন্দি লাশের কথা। তবে আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারি নাই।
‘আমার এক মামা আছে সাংবাদিক। তাকে জানাই। পরে তিনি পরে সবাইকে জানিয়েছেন।’
শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি পুরো ঘটনায় ভীষণ বিরক্ত। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা কোনো কাজ হলো? বিকাল থেকে আমাদের পাগল বানিয়ে দিয়েছে। তারা কেন এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে আমি জানি না। আমরা দৈনন্দিন কাজ নিয়ে এমনিতেই নানা ঝামেলায় থাকি।
‘এর ভেতরে বস্তাবন্দি লাশের কথাটা বলে আমাদের ভেতরে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা ঘটনাস্থলে দিয়ে দেখি বস্তাবন্দি একটি ফ্রিজের কমপ্রেসর। কমপ্রেসরটা জং পড়ে গেছে এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় বস্তাবন্দি করে রেখেছিল। সেটা ভিজে লালচে দেখিয়েছে। আর হুট করে একটা নিউজ দিয়ে দিল।’
হুলুস্থুলের পর এই কমপ্রেসরটি পাওয়া যায় বস্তার ভেতর থেকে। ছবি: নিউজবাংলা
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনাদের সাংবাদিকদের নিউজ দেয়ার আগে অন্তত একটু নিশ্চিত হওয়া উচিত। আমাদের বক্তব্য ছাড়াই তারা নিউজ দিয়ে দিল। টিভির স্ক্রলে দেখে প্রথমে সাংবাদিকরাই আমাদেরকে ফোন দেয়। বিকাল চারটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে আমাদের কাছে ফোন আসে।’
থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকিরুল ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি শ্যামলী পার্কের দিকে ডিউটিতে ছিলাম। তখন অফিস থেকে ফোন আসে শ্যামলী স্কয়ারের পাশে হায়দার হোটেলের পেছনে নাকি বস্তাবন্দি লাশ পড়ে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছি।’
গুজবটি কীভাবে ছড়িয়েছে, সেটাও জানতে পেরেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বলেন, ‘সেখানে পুরনো টয়লেটে ১৩ থেকে ১৪ বছরের একটি বাচ্চা গিয়েছিল। সে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করে। সেখানে তিন ফুটের মতো লম্বা একটি বস্তার ভেতর থেকে জং ধরা কম্প্রেসার থেকে লালচে পানি পড়ছিল। রক্ত মনে করে করে সে ভয়ে চিল্লাচিল্লি করে। তখন এলাকায় প্রচার হয় বস্তায় ভরা লাশ।’
তিনি বলেন, ‘হায়দার হোটেলের সিকিউরিটি আল আমিনকে নিয়ে আমরা বস্তাটি খুলি। খুলে দেখি ভেতরে কমপ্রেসর।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে অনেক মিডিয়ায় নিউজ হয়ে গেছে। টিভির স্ক্রলে দেখাচ্ছে বস্তা ভরা লাশের কথা। অযথা আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলা হয়েছে।’