বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিহানের সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায়

  •    
  • ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:০৯

দিহান মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের অনেক দিন ধরে চিনতেন- কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এমন তথ্য নাকচ করেছে মেয়েটির পরিবার। নিউজবাংলাকে মেয়েটির মা বলেন, ‘আমরা দিহানকে কখনোই চিনতাম না। দিহান আমার মেয়ের সাথে একসঙ্গে কোচিংও করত না। দিহান নামটি ওই দিন প্রথম শুনেছি। সেদিন দুইবার তার সাথে ফোনে কথা হয়েছে।’

কলাবাগানে ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগ উঠেছে যে ফারদিন ইফতেখার দিহানের বিরুদ্ধে, তার সঙ্গে চার মাস আগেও পরিচয় ছিল না নিহত কিশোরীর।

দুজনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলাদা, বাসাও এক এলাকায় নয়। তবে দুজনই ছিলেন ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী।

দিহানের জবানবন্দি ও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গত অক্টোবরের কোনো এক সময়ে ওই কিশোরীর সঙ্গে দিহানের যোগাযোগ তৈরি হয়, এরপর ফোনে নিয়মিত কথা বলতেন তারা।

এই বন্ধুত্ব কিছুদিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়, যার কিছু প্রমাণ রয়েছে মেয়েটির ইনস্টাগ্রামে।

আদালতে দিহানের জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, ৫ ডিসেম্বর তাদের প্রথম দেখা হয়। এরপর আরও আট ১০ বার তাদের সাধারণ দেখা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি নতুন বছরের ক্ষণে ইনস্টাগ্রামে দিহানের সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করে দেখা না হওয়ার আক্ষেপ জানান মেয়েটি।

দিহানের পরিবারের সদস্যরা নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) দিহানের মা নিজের অসুস্থ বাবাকে দেখতে বগুড়া যান। আর দিহানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আছেন রাজশাহীতে। অসুস্থ বাবার সঙ্গে রাজশাহীতেই থাকেন দিহানের বড় ভাই। আর চাকরিজীবী মেঝ ভাই ঘটনার সময় ছিলেন অফিসে।

বাসা ফাঁকা থাকার এই সুযোগটি নিয়ে মেয়েটিকে বাসায় ডেকে আনেন দিহান। মেয়েটির এক আত্মীয় নিউজবাংলাকে জানান, মৃত্যুর পর তারা দিহানের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওর মোবাইল ফোন হাতে পাইনি। তবে ওর সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা মনে করি, সেখান থেকেই ওই ছেলের সাথে ওর পরিচয়। ’

কোচিংয়ের শিট নেয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যান মেয়েটি। বাসার প্রহরী শাহাবুদ্দীন নিউজবাংলাকে জানান, সেদিন বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি মেয়েটিকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন।

দিহানের বাসা যে ভবনে

দিহান মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের অনেক দিন ধরে চিনতেন- কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এমন তথ্য নাকচ করেছে মেয়েটির পরিবার। নিউজবাংলাকে মেয়েটির মা বলেন, ‘আমরা দিহানকে কখনোই চিনতাম না। দিহান আমার মেয়ের সাথে একসঙ্গে কোচিংও করত না। দিহান নামটি ওই দিন প্রথম শুনেছি। সেদিন দুইবার তার সাথে ফোনে কথা হয়েছে।’

কী বলছে দিহানের পরিবার

মেয়েটির মুত্যুর ঘটনায় দিহানের পরিবারেও নেমে এসেছে অন্ধকার। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, অপরাধ অনুযায়ী তারাও দিহানের বিচার চান। এতে তার ফাঁসি হলেও তাদের কোনো আক্ষেপ নেই।

তবে এই পরিবারের দাবি, সম্মতির ভিত্তিতেই সেদিন মেয়েটি দিহানের বাসায় এসেছিলেন। দিহানের মেঝ ভাই নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানতাম না যে আমার ভাইয়ের কারও সাথে প্রেমের সম্পর্ক আছে। এই ঘটনার পর আমরা মেয়েটির ব্যাপারে জানতে পারি। আগে থেকে কখনই দুই পরিবারের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

‘‘আমরা দুই ভাই দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য পড়াশোনা করছিলাম। ঘটনার দিন দিহান আমাকে ফোন করে বলেন, ‘ভাই তুমি আসো। তুমি না আসলে হবে না।’’

এই ফোন পেয়ে অফিস থেকে বের হন দিহানের মেঝ ভাই। পথিমধ্যে দিহান আবার ফোন করে জানান, তার সঙ্গে একটি মেয়ে ছিল, সে মারা গেছে।

দিহানের মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর দিহানের সাথে পরিবারের কারো দেখা হয়নি। তার এই বিষয়ে আমরা লজ্জিত। ছেলে এমন কোনো অন্যায় করতে পারে এটা ধারণাতেও ছিল না।’

বয়স বিভ্রান্তিতে ক্ষুব্ধ মেয়েটির পরিবার

মেয়েটির পরিবারের দাবি, ময়নাতদন্তের তথ্য যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা সঠিক নয়। সেখানে ‘বিকৃত যৌনাচার’-এর বিষয়টিতেও বিব্রত পরিবার। এ ছাড়া মেয়েটির বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ।

মেয়েটির ওই আত্মীয় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে পুলিশ মেয়ের বয়স ১৯ বছর লিখেছিল, যা নিয়ে ময়নাতদন্ত করতে কালক্ষেপণ হয়। পাসপোর্ট অনুযায়ী ওর বয়স ১৭ বছর। তা ছাড়া একটা ও লেভেল পরীক্ষার্থী মেয়ের বয়স ১৯ বছর কীভাবে হবে!

তিনি বলেন, ‘যেখানে একটা মার্ডার কেস করা হয়েছে, আর সেখানে তাকে ১৯ বছর বয়সী দেখানো হচ্ছে। এটা কোনভাবেই ঠিক না। এটা একটা ইমম্যাচিউর রেপ। পাসপোর্ট অনুযায়ী তার বয়স ১৭ বছর চার মাস। তার সম্মতি নিয়েও যদি শারীরিক সম্পর্ক করে, তাহলেও সেটা ধর্ষণের পর্যায়ে পড়বে।’

এই আত্মীয়র দাবি, দিহান মেয়েটিকে কোনোভাবে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মেয়েটি তার মাকে ফোন করে কোচিংয়ে যাওয়ার কথা জানান। ছেলেটি আগে থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করার কারণেই হয়ত এটা ঘটেছিল।

দিহানের বাসার এক প্রহরী পলাতক

দিহান যে ভবনে থাকতেন সেখানে দুইজন প্রহরী পালা করে দায়িত্ব পালন করেন। মোতালেব নামে একজনের নাইট ডিউটি থাকায় দিনের বেলা তিনি ঘুমিয়েছিলেন। দুলাল নামে অপর প্রহরী ঘটনার সময় দায়িত্বে ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবারের পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।

রাতের বেলার প্রহরী মোতালেব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেলা ২টার কিছু পর প্রশাসনের লোকেরা এসে আমারে ডাক দেয়। আমি তখন ঘটনার কিছুই জানি না, খোঁজ নিয়ে দেখি দুলাল নাই।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার পর মেয়েটিকে অচেতন অবস্থায় নিচে নামিয়ে এনে দুলালের সাহায্যেই গাড়িতে তোলেন দিহান।

মোতালেব জানান, করোনার আগে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে দুলাল যোগ দেন। তার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল।

দিহানের বাসায় সেদিন সকালে এক গৃহপরিচারিকা কাজ করে চলে যান। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, দুইমাস ধরে তিনি এই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছেন। তবে দিহানকে কখনোই কোনো মেয়েকে বাসায় আনতে দেখেননি।

এ বিভাগের আরো খবর