বরিশালে আইনের ছাত্র রেজাউল করিম রেজার মৃত্যু নির্যাতনের কারণে হয়নি বলে দাবি করছেন তাকে চিকিৎসা দেয়া আতিক আহম্মেদ আকন্দ।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসক বলছেন, শরীরের একই জায়গায় বারবার নেশা জাতীয় দ্রব্য ইনজেকশনের সুই দিয়ে পুশ করায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ক্ষত থেকেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় রেজার মৃত্যু হয়েছে।
যদিও এই দাবি নাকচ করেছে রেজার পরিবার। তারা বলছে, কারাগার থেকে যখন তাদের ফোন দেয়া হয়, তখন অন্য একটি কথা বলা হয়েছে। এখন চিকিৎসক কথা বলছেন পুলিশের সুরে।
বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয়ের এই ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে কয়েক দিন ধরে তোলপাড় হচ্ছে বরিশালে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ধরে নেয়ার পর নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন: ‘মাদক দিয়ে ফাঁসানোর পর’ হেফাজতে মৃত্যু
রেজা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন গত ২৯ ডিসেম্বর। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১ জানুয়ারি তাকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। ২ জানুয়ারি পরিবারকে জানানো হয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
এর পর থেকেই রেজার স্বজনরা অভিযোগ করে আসছিলেন যে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহির নির্যাতনের শিকার হয়ে রেজা মারা গেছেন।
তবে বরিশাল মহানগর পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে নির্যাতনে নয়, আগের ক্ষত স্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের এই দাবি অগ্রাহ্য করে রেজার স্বজন ও এলাকাবাসী তার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করে। ভাঙচুর করা হয় এসআই মহিউদ্দিনের বাড়িও।
- আরও পড়ুন: হেফাজতে মৃত্যু, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ
এত কিছুর মধ্যেও সে সময় গণমাধ্যমে কথা বলেননি রেজার চিকিৎসায় থাকা চিকিৎসকরা।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর নিউজবাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের ১ নম্বর সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার আতিক আহম্মেদ জানালেন, পুলিশের দাবিই ঠিক।
তিনি বলেন, ‘সুচের মাধ্যমে প্রায়ই নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করতেন রেজা। এ কারণে তার হাত-পায়ের শিরায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক ছিল না। বেশির ভাগ সময় তিনি বাম পায়ের সংযোগস্থল (কুচকি) দিয়ে ইনজেকশন নিতেন। সেখানেই ক্ষত সৃষ্টি হয়। ওই ক্ষত দিয়েই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।’
রেজার মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধদের সড়ক অবরোধ। ছবি: নিউজবাংলা
নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক আতিক বলেন, তার শরীরে কোনো মারধর বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। চিকিৎসার শুরুতে যখন জ্ঞান ছিল তখন এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলেও রেজা নির্যাতনের কথা বলেননি।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত সার্জারির মাধ্যমে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু রোগীর (রেজা) আগে থেকেই রক্তশূন্যতা থাকায় আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় সার্জারির আগেই তার মৃত্যু হয়।’
তবে পুলিশ ও চিকিৎসকদের দাবি নাকচ করে রেজার ভাই আজিজুল করিম বলেন, ‘এসব তথ্য মিথ্যা। রেজার শরীরে আগে থেকে কোনো ক্ষত ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে তখন আমাদের বলা হলো, বাথরুমে পড়ে রেজা আঘাত পায়, এর পর আবার পুলিশ আরেক কথা বলে। একেক জন একেক কথা বলে। রেজাকে যখন ধরে নিয়ে যায় তখন ও সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল।’
রেজা বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষায় ছিলেন।
নগরীর সাগরদী হামিদ খান সড়ক থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে রেজাকে আটক করেন ডিবির উপপরিদর্শক মহিউদদ্দিন। তিনি দাবি করেছিলেন, মাদকসহ হাতেনাতে ধরা হয়েছিল রেজাকে।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় করা মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে রেজাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় রেজাকে হাসপাতালে নেয়া হয় বলে জানিয়েছিল মহানগর পুলিশ।
এ ঘটনায় নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগে ডিবির উপপরিদর্শক মহিউদ্দিনসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জানুয়ারি মামলা করেন রেজার বাবা ইউনুস মুন্সি।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ডিবির উপপরিদর্শক মহিউদ্দিনকে প্রত্যাহার করে মেট্রো পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।