রাজধানী ঢাকার একটি আবাসিক ভবনে গার্ডের চাকরি করেন আনিস হাসান। এ বছর শীতের শুরুতে ভবনের নিচে ঘুমানোর জায়গা নিয়ে খুব আপত্তি ছিল তার। কারণ, তার শোয়ার ঘরের গ্লাসের একটা অংশ গোল করে কাটা। রাতে সেখান দিয়ে বাতাস ঢুকত। তাই মোটা কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখতেন জায়গাটা। তবে গত কয়েকদিন সেই গোল জায়গায় দেখা যায়নি কাগজ। ঘরে একটি ছোট ফ্যানও লাগিয়েছেন আনিস হাসান।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, গত কয়েক দিন হলো শীত টেরই পাচ্ছেন না। রাতে গায়ে কাঁথা দিলে হাসফাস লাগে তার।
‘আগে ওই জায়গা দিয়ে বাতাস আইতো। তখন শীত লাগলেও এখন বাতাসের জন্য ফ্যান আনোন লাগছে। এ কেমন পৌষ মাস!’, বলেন চল্লিশ পেরুনো আনিস হাসান।
চলতি শীত মৌসুমের প্রথম দিকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় দেশের কিছু এলাকা দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তখন রাজধানীতে মোটামুটি শীত অনুভূত হয়।
এরপর দিন যত গড়িয়েছে, শীত তত কমেছে। যেখানে এই সময় দেশে গড় তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা সেখানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ ডিগ্রিতে।
শীতের তেমন দেখা নেই। শিশুরা খেলছে আপন মনে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
আনিসের মতো রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের পৌষ মাসের গরম নিয়ে অনুভূতির মিল পাওয়া যাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত কয়েকদিনের রেকর্ড দেখলে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত কয়েক দিনই দিন ও রাতের তাপমাত্রা বেড়েছে। শুক্রবার ৮ জানুয়ারি (২৪ পৌষ) সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৯ ডিসেম্বর দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে এবার শীতের তেমন কোনো প্রকোপ নেই। শুক্রবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৭ ডিগ্রি। এ মৌসুমে ঢাকার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
দেখে বোঝার উপায় নেই এটা শীতকাল নাকি গ্রীষ্ম
শুক্রবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে আট থেকে ১০ ডিগ্রি এবং মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে থাকে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে, আরও ৪ দিন পর রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে খুব বেশি কমবে না।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পৌষের শেষ দিকে কিছুটা হলেও শীতের আমেজ টের পাবে দেশের মানুষ। তবে দেশের সব জায়গায় তীব্র শীত অনুভূত হবে না।
অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন দিনের তাপমাত্রা গড়ে ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে স্থান ভেদে এক থেকে ছয় ডিগ্রি বেশি।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘শীতের সময় এমন গরম পড়ার মূল কারণ পূবালী বায়ুর আধিক্য। আরব অঞ্চল থেকে দেশের আকাশে মেঘ ঢুকতেছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে, সিলেট-কুমিল্লা অঞ্চলে একটা লঘুচাপ আছে।
‘এখন উত্তরের বাতাসের যেমন গতি থাকা উচিত তেমন নেই। এই বাতাস বেশি থাকলে তাপমাত্রা কম থাকে।’
পৌষেও শীতের দেখা নেই, শ্রমিক করছেন স্বাভাবিক কাজ
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘এই কারণে দিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আবার রাতের তাপমাত্রাও কমছে না। জানুয়ারির ১২ থেকে ১৪ তারিখের পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। তবে সেই পরিবর্তনে যে খুব বেশি শীত পড়বে তা নয়।’
তিনি বলেন, ‘১৪ তারিখের পর একটা শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তখন দিনের তাপমাত্রা এখন যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে কমতে পারে।’
অধিদপ্তরের শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।