রাজধানীর কলাবাগানে যে কিশোরীটি মারা গেছেন, তার সঙ্গে কারও যৌন সম্পর্কের বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, কী এমন কারণ ছিল যার ফলে প্রচুর রক্তপাতে তার মৃত্যু হয়।
মেয়েটির বাবার করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। যদিও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, তারা আঘাতের প্রমাণ পাননি। তবে বিকৃত যৌনাচারের প্রমাণ মিলেছে।
প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের পর মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়েন।
স্ত্রী রোগ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অপ্রাপ্তবয়স্কর ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কের সময় কোনো কোনো পরিস্থিতিতে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নিলে জীবনহানির আশঙ্কা এড়ানো সম্ভব। যৌনাচারের ক্ষেত্রে অজ্ঞতা বা বিকৃতিও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
- আরও পড়ুন: ধর্ষণ: মারা গেলেও নাম-ছবি প্রকাশ দণ্ডনীয়
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মানুষের মৃত্যুর ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কারণগুলোর একটি বলে মনে করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নূর সাঈদা। এই চিকিৎসক বলেন, ‘তবে এক্ষেত্রে (কলাবাগানে কিশোরীর মৃত্যু) অন্য কোনো আঘাত থাকতে পারে।’
এই ধরনের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্কর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কারণে অনেক সময় রক্তপাত হতে পারে। এমন ভুক্তভোগী আমাদের হাসপাতালে প্রচুর ভর্তি হয়। সঠিক সময় রক্ত, স্যালাইন দিলে তারা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। ফলে রোগী বেঁচে যায়।’
তিনি বলেন, ‘শারীরিক সম্পর্ক বড়দের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা হলেও ছোটদের জন্য এটা অস্বাভাবিক। কারণ, বাচ্চা মেয়েদের যৌনাঙ্গ ভালোভাবে ডেভেলপড হয় না। সেখানে জোর করলে স্থানটি ছিড়ে যেতে পারে। এই কারণেও রক্তপাত হতে পারে। এই ঘটনা ঘটলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।’
আরেক গাইনি চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালমা আক্তার মুনমুন জানান, তিন বছর আগে একই ধরনের একটি ঘটনার চিকিৎসা করেছিলেন। তবে দ্রুত হাসপাতালে আসায় মেয়েটি বেঁচে গিয়েছিলেন।
- আরও পড়ুন: বিকৃত যৌনাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তে
তিনি বলেন, ‘তারা ছিল প্রেমিক-প্রেমিকা। শারীরিক সম্পর্কে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার কারণে হাসপাতালে এসেছিল। রোগীর অবস্থা দেখে আমি তাদের অভিভাবকদের ফোন দিয়েছিলাম। সেই মেয়েটির যৌনাঙ্গ কিছু অংশ ছিঁড়ে গিয়েছিল, অপারেশন করে রক্ত বন্ধ করতে হয়েছিল। তবে সঠিক সময় হাসপাতালে আনার কারণে সে এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।’
এই চিকিৎসক জানালেন, মেয়েদের যৌনাঙ্গ সংবেদনশীল হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের সময়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ক্ষত তৈরি হলে রক্ত বন্ধ হতে অনেক সময় লাগে। অনেক সময় অপারেশন করতে হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিখা গাঙ্গুলী বলেন, ‘অনেক সময় শারীরিক সম্পর্কটা জোরপূর্বক করা হয়, এই ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের ব্লাড ভেসেল ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। তবে সম্পর্কে যদি দুই জনের সম্মতি থাকে রক্তপাতের ঘটনা অনেক কম ঘটে।’
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক নুসরাত আফরীন নীলা মনে করেন, যৌনাচারের কারণে প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ের মৃত্যু খুবই অস্বাভাবিক। এখানে অন্য কিছু থাকতে পারে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শারীরিক সম্পর্কের কারণে কোনো কোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে মৃত্যু হতে পারে না, যদি না অন্য কিছু দিয়ে সেখানে আঘাত করা হয়।’
ভারতের একটি ঘটনাও সামনে আনেন তিনি। এই চিকিৎসক বলেন, ‘ভারতের এক চিকিৎসকে ধর্ষণের পর তার যৌনাঙ্গে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের তার মৃত্যু হয়।’
কলাবাগানের কিশোরীর ময়নাতদন্ত করে চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, তার যৌনাঙ্গের পাশাপাশি রক্ত পাওয়া গেছে পায়ুপথেও।
বিকৃত যৌনাচারের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে যোনিপথ ও পায়ুপথে কিছু ইনজুরি আমরা পেয়েছি। মূলত সেই ইনজুরিগুলোর জন্যই সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু বডির অন্য কোথাও জোরাজুরির কোনো আলামত পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘‘তার বডি থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে সে মারা গিয়েছে। তার রক্তক্ষরণ হয়েছে যোনিপথ ও পায়ুপথ থেকে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে ‘হাইপো ভোলেমিক’ শকে মারা গেছে।’’