কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পথিমধ্যে তিনি ফোনে তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা হাসপাতালে দিহানের সঙ্গে যোগ দেন।
তবে ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটে।
ঘটনা তদন্তে যুক্ত পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে কলাবাগান লেক সার্কাস রোডের একটি বাড়িতে। চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন দিহান। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন দুলাল। ঘটনার পরদিন শুক্রবার তিনি কাজে যোগ দেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করার চেষ্টা করলে এ প্রতিবেদক সেটি বন্ধ পান।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবনের এক কেয়ারটেকার নিউজবাংলাকে জানান, দিহানের গাড়িতে করে বাসায় এসেছিলেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বাসায় অসুস্থ হওয়ার পর তাকে কীভাবে গাড়িতে নেয়া হয়েছে, সে তথ্য তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
এ ভবনের গেট ও নিচতলায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নেয়ার তথ্য জানা গেছে পুলিশের কাছ থেকে। রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান জানান, অচেতন হয়ে যাওয়ার পর ওই কিশোরীকে দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাসা থেকে সামান্য দূরের আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা এখনও পাওয়া যায়নি। সেটি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
হাসপাতালে নেয়ার পর যা ঘটে
ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত অবস্থায় পান বলে জানিয়েছে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
- আরও পড়ুন: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু: পুলিশ
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওইদিন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর ১টার দিকে জরুরি বিভাগে ছুটে আসেন দিহান। তিনি বলেন, গুরুতর অসুস্থ রোগী গাড়িতে রয়েছে। তিনি হুইল চেয়ার বা স্ট্রেচারে রোগীকে হাসপাতালে আনতে বলেন।
সঙ্গে সঙ্গে এক জন ওয়ার্ড বয় ও এক জন পেশেন্ট অ্যাটেনডেন্ট হুইল চেয়ার নিয়ে বাইরে যান। তারাই অচেতন অবস্থায় থাকা ওই কিশোরীকে গাড়ি থেকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।
চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন কিশোরী বেঁচে নেই। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তারা।
হাসপাতালটির ওয়ার্ডবয় আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই সময় আমি আর মোরসালিন (পেশেন্ট অ্যাটেনডেন্ট) ছিলাম। হুইল চেয়ার নিয়ে গিয়ে দেখি মেয়েটা রক্তাক্ত এবং অচেতন অবস্থায় আছে। পরে স্যারেরা (দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক) জানান, আগেই মারা গেছেন।’
- আরও পড়ুন: বিকৃত যৌনাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তে
ওই কিশোরী মারা গেছেন জানার পর হাসপাতাল থেকে কলাবাগান থানায় খবর দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কাস্টমার কেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মন সবুজ।
তিনি বলেন, পুলিশ এসে মরদেহের সুরতহালসহ যে গাড়িতে করে ছাত্রীকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটি জব্দ করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া যে ছেলে মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিল তাকেসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
- আরও পড়ুন: ধর্ষণ: মারা গেলেও নাম-ছবি প্রকাশ দণ্ডনীয়
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা কলাবাগান থানায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ফারদিন ইফতেখার দিহানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করার পর শুক্রবার দুপুরে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পর আসামি দিহান বন্ধুদের হাসপাতালে আসতে বলেন। তার কলে তিন জন আনোয়ার খান হাসপাতালে আসেন। বিভিন্নভাবে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।’
আবুল হাসান বলেন, ‘সন্দেহ ছিল, তারাও এ ঘটনায় যুক্ত ছিল কি না। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। যে কারণে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’