দেশে গ্যাসের সরবরাহ ক্রমাগতভাবে কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খোলা বাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে আমদানিকৃত এলএনজির দৈনিক সরবরাহ ৪০০ মিলিয়ন (৪০ কোটি) ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকেও উত্তোলন কমছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনার টেকসই পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদভাবে অবহিত না হয়েই গত সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি খোলা বাজার থেকে কেনা হবে। অক্টোবর-নভেম্বরে দু দফায় ওই পরিমাণ এলএনজি কেনাও হয়। তাতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল।
কিন্তু তারপরই আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। এখন প্রতি ইউনিট (এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট) এলএনজির দাম উঠেছে ১২ মার্কিন ডলারে, যা অক্টোবরে ছিল ৬ ডলারের কম। এই অবস্থায় খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জাতীয় গ্রিডে এলএনজির সরবরাহ কমতে থাকে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ নভেম্বর জাতীয় গ্রিডে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ৫৩১ দশমিক ২ মিলিয়ন ঘনফুট। গত ১ ডিসেম্বর তা ছিল ৪৯৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন। ১৫ ডিসেম্বর ছিল ৪৬১ মিলিয়ন। ২৬ ডিসেম্বর ৩৯৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন। গত ৫-৬ জানুয়ারি তা আরও কমে হয়েছে ৩৯২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ঘনফুট।
অন্যদিকে, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকেও গত মাস দুয়েক ধরে গ্যাস উত্তোলন কমছে। তিনটি দেশিয় কোম্পানির (বিজিএফসিএল, এসজিএফএল ও বাপেক্স) পরিচালনাধীন ক্ষেত্রগুলোতে চালু কূপের সংখ্যা মোট ৭০টি। এগুলোর মোট উত্তোলন ক্ষমতা দৈনিক এক হাজার ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকে মোট গড় উত্তোলন হচ্ছে ৮৫০ মিলিয়নেরও কম। গত ৫-৬ জানুয়ারি এই ৭০টি কূপে গ্যাস উত্তোলন হয়েছে মোট ৮৪৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট।
এ ছাড়া দুটি বিদেশি কোম্পানির (শেভরন ও টাল্লো) পরিচালনাধীন চারটি ক্ষেত্রে চালু কূপের সংখ্যা মোট ৪৩টি। এগুলোর সর্বমোট উত্তোলন ক্ষমতা দৈনিক ১ হাজার ৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গড় উত্তোলন প্রায় ১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূলত: দেশিয় কোম্পানির ক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন কম এবং এলএনজির সরবরাহ স্বল্পতাই গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণ।
এর প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘দাম বৃদ্ধি এবং খোলা বাজার থেকে কেনার ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতার কারণে এলএনজির সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে সাধ্যমত উত্তোলন বাড়িয়ে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালানোরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।'
গ্যাসের সরবরাহ স্বল্পতার কারণে অন্তত ২৫টি ছোট-বড় এবং সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। এই বন্ধ কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় তেলচালিত কেন্দ্রগুলো বেশি করে চালিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে।