বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে মেয়র পদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।
২০১৫ সালেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি জয়ী হন। তাই এবার তাকে ঠেকাতে একজোট হয়ে কাজ করছে মেয়র পদের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রচার চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান মহারাজ। গত নির্বাচনেও তিনি নৌকা নিয়ে লড়েছিলেন। তবে পরাজিত হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাতের কাছে।
তাই এবার বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই ভোটের মাঠে ঘায়েল করাই লক্ষ্য মহারাজের।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন মূলত ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। ব্যবসার উদ্দেশে রাজনীতিতে এসেছেন টাকার জোরে।
‘দ্বিতীয়বারও দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে তিনি পাননি, কারণ হাইব্রিডদের আমার দল মূল্যায়ন করেনি। বিদ্রোহী হয়ে টাকার জোরে সব ম্যানেজ করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।’
‘আমাদের কাছে শাহাদাত হোসেনই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে দলের শক্ত অবস্থান, পৌরবাসীর কাছে তার রাজনীতির নামে ব্যবসার মুখোশ উন্মোচন হওয়া ও ভোটারদের সচেতনতায় এবার শাহাদাত হোসেনকে আমরা পরাজিত করে বিজয় নিশ্চিত করব।’
পৌরসভার মেয়র পদে লড়ছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম। এই পৌরসভায় বিএনপির পরাজয়ের অভিজ্ঞতাই বেশি। তারপরও এবার আওয়ামী লীগের দুই নেতার প্রতিযোগিতার সুযোগ কাজে লাগাতে প্রচারে সরব বিএনপি দলীয় প্রার্থী।
বিএনপির প্রার্থী আবদুল হালিম। ছবি: নিউজবাংলা
আবদুল হালিমও নৌকা প্রার্থীর সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, নৌকা নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাতই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
তিনি বলেন, ‘ভোটের মাঠে আমার বা নৌকার প্রার্থীর কালো টাকা বা অবৈধ আয়ের উৎস নেই। আমরা পেশাজীবী রাজনীতিবিদ। শাহাদাত রাজনীতিতে ব্যবসার জন্য এসেছেন। তিনি গত দশ বছর পৌরসভায় যাচ্ছেতাই করেছেন। উন্নয়নের নামে শত কোটি টাকার কাজ কৌশলে নিজে ঠিকাদারি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। আমরা এই শাহাদাতের হাত থেকে পৌরসভা উদ্ধার করার জন্য লড়াইয়ের মাঠে নেমেছি।’
তবে এবারও জয় পাবেন বলে নিশ্চিত মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বরগুনা পৌরসভার যে উন্নয়ন করেছি, সবই দৃশ্যমান। বরগুনা শহরকে আমি আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করেছি। যে কারণে ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আমি আবার মেয়র প্রার্থী হয়েছি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও আমি গত পাঁচ বছর পৌরসভায় মানুষের পাশে ছিলাম, মানুষের দাবিতেই আমি আবার প্রার্থী হয়েছি।’
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রভাব খাটিয়ে তাকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। হামলার আশঙ্কায় ‘ডামি’ হিসেবে নিজের মেয়েকেও তিনি প্রার্থী করেছেন। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাবুসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মেয়র শাহাদাত।
- আরও পড়ুন: খুন হওয়ার শঙ্কায় মেয়েকেও মেয়র প্রার্থী
তিনি জানান, এসব কারণে প্রচারে ততটা সরব নন তার লোকজন। তবে দিনরাত একাই ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন বলে জানালেন শাহাদাত।
বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত হোসেন
এই পৌরসভায় মেয়র পদের জন্য আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থী ছাড়াও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাত জন। তারা হলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাতের মেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহসিনা মিতুল, জাতীয় পার্টির আবদুল জলিল হাওলাদার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জালাল উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাবুদ্দিন, জসীম উদ্দিন, ছিদ্দিকুর রহমান পান্না ও নিজাম উদ্দিন।
এই পৌরসভায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ জানুয়ারি, ভোট ৩০ জানুয়ারি।