রাজধানীর কলাবাগানে ধর্ষণে এক ছাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠায় তার নাম ও ছবি প্রকাশের সমালোচনা করেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ধর্ষণের শিকার কারও নাম ও ছবি প্রকাশ আইনে দণ্ডনীয়। ভুক্তভোগী মারা গেলেও তার পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মেয়েটি মারা যাওয়ার পর একাধিক গণমাধ্যম তার নাম ও ছবি প্রকাশ করে। পরে রাতে তার বাবা থানায় ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ করে মামলা করেন।
পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিহত মেয়েটির ছবি প্রকাশ করেছে অনেকে। এটি আইনত ঠিক নয়। এটি পরিবার ও মেয়েটির জন্যও অপমানজনক। ছবিটি সরিয়ে ফেলা উচিত।’
২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ নম্বর ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, নির্যাতিতা নারীর সংবাদ এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে না যাতে ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ পায়।
এই আইন লংঘন করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় সাজা হতে পারে।
আইনে মৃত্যুর পর প্রকাশ করা যাবে, এমন কথা বলা নেই।
কী বলছেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা
ধর্ষণ-নির্যাতনের মামলায় ভুক্তভোগী জীবিত থাকলে তাদের পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকছে গণমাধ্যমগুলো। তবে মৃতদের নাম ও পরিচয় প্রায়শই প্রকাশ করা হয়।
সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক কুররাতুল আইন তাহমিনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে নাম বা ছবি প্রকাশ উচিত না। এটা গণমাধ্যম নৈতিক দিক দিয়েও করা যায় না। আইনগত ভাবেও পারে না।’
তিনি বলেন, ‘নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে যেসব মামলা হয় তাতে এমনভাবে ঘটনার বর্ণনা দিতে হবে যাতে ভুক্তভোগীর নাম পরিচয় যেন কোনোভাবে প্রকাশ না পায়। এখানে মারা যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্ন নাই।’
মারা যাওয়ার পরেও কারও ছবি প্রকাশ হলে তার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এসব ঘটনায় যে সামাজিক স্টিগমা হয়, তাতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও ভুক্তভোগী হতে পারে।’
ভারতের নয়াদিল্লিতে বাসে ধর্ষণের ঘটনায় যে তীব্র আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে ভুক্তভোগীর নাম প্রকাশ না করার উদাহরণও দেখান এই গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ।
বলেন, ‘সেখানে একটি প্রতীকী নাম নির্ভয়া ব্যবহার করা হয়। তার আসল নাম তো কেউ জানে না।’
কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে কারও নাম প্রকাশ করার দরকার পড়লে ভুক্তভোগীর পরিবার বা অভিভাবকদের কাছ থেকে বুঝিয়ে তাদের লিখিত বা রেকর্ডেড সম্মতি নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ মারা গেলেও তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। এক জন নানা কারণেই ভিকটিম হয়ে গেছেন। এখন তাকে যদি আমরা জনসমক্ষে আমরাই হেয় করি সেটা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।’
একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এক কথায় আমি বলতে চাই, এটা যারা করেছে, তাদের মধ্যে সামান্যতম দায়িত্বজ্ঞান নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেখি, মৃত্যুর পর অনেকেই ভুক্তভোগীর নাম ঠিকানা বা ছবি প্রকাশ করে। তবে দায়িত্বের জায়গা থেকে এটা কখনও প্রকাশ করা উচিত নয়। এমনকি ভিকটিমের স্কুলের নামটাও দেয়া যাবে না। বাবা-মায়ের নামও প্রকাশ উচিত হবে না। এটাই সাংবাদিকতার নীতি।’