রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে বিকৃত যৌনাচারের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। মেয়েটি রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছে, এ বিষয়ে নিশ্চিত তিনি।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়েটির গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদও বলেছেন, কোনো জোরাজুরির আলামত তারা পাননি।
মেয়েটির যৌনাঙ্গের পাশাপাশি পায়ুপথেও জমাট বাঁধা রক্ত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, দলগত শারীরিক মিলনের ফলে এমনটা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। এ জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মেয়েটিকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তাদের কাছে আনার আগেই মৃত্যৃ হয় মেয়েটির।
এই ঘটনায় মেয়েটির বাবা ধর্ষণ ও হত্যার মামলা করেছেন, যাতে আসামি করা হয়েছে ফারদিন ইফতেখার দিহান নামে এক যুবককে। তিনি ‘এ’ লেভেলের ছাত্র।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বেলা ১১টার পর মেয়েটি কোচিংয়ের শিট আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর দুপুরের পর তার মায়ের মোবাইল ফোনে কল করেন দিহান। জানানো হয় মেয়েটি অচেতন হয়ে গেছে।
হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির মা জানতে পারেন তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। রাতেই মামলা করেন বাবা।
দিহানকে এর আগেই আটক করে পুলিশ। মামলা করার পর শুক্রবার বিকালে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করা হয়। তবে দিহান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে আর রিমান্ড শুনানি হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে দিহান মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন।
মেয়েটির ময়নাতদন্ত হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘তার বডি থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে সে মারা গিয়েছে। তার রক্তক্ষরণ হয়েছে যোনিপথ ও পায়ুপথ থেকে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে ‘হাইপো ভোলেমিক’ শকে মারা গেছে।’
মানুষের মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের হয়ে গেলে হৃদপিণ্ড স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। এ কারণে হৃদযন্ত্র শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না; মানুষ মারা যেতে পারে।
বিকৃত যৌনাচারের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যোনিপথ ও পায়ুপথ দুই রাস্তা থেকেই আমরা রক্তক্ষরণের আলামত পেয়েছি। আমরা জোর জবরদস্তির কোনো আলামত পাইনি।
‘তবে যোনিপথ ও পায়ুপথে কিছু ইনজুরি আমরা পেয়েছি। মূলত সেই ইনজুরিগুলোর জন্যই সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু বডির অন্য কোথাও জোরাজুরির কোনো আলামত পাইনি।’
যৌনাচার দলগত ছিল কি না, এই বিষয়টি জানতে কাজ চলছে জানিয়ে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘তার (মেয়েটি) বডি থেকে আমরা ডিএনএ সংগ্রহ করেছি। সেটি আমরা ল্যাবে পাঠিয়েছি। তার রিপোর্ট আসলে আমরা জানতে পারব এটা গ্যাং রেপ ছিল কি না।’
শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশিদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দিহানের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে দিহান বলেছেন, ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে বন্ধুদের ডেকে তাদের সহযোগিতায় মেয়েটিকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, জবানবন্দি শেষে দিহানকে বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়।
‘জবানবন্দিতে দিহান জানান, মেয়েটির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্র ধরেই তার বাসায় যান এবং তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়।’
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আসামির জবানবন্দির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। চিকিৎসকের ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পারিপার্শ্বিক বিষয় ও জবানবন্দির বর্ণনা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
সিএমএম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, ‘এই আসামি নিজেকে সম্পৃক্ত করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মামলার তদন্তে বড় অগ্রগতি হলো। আশা করছি, দ্রুতই তদন্ত শেষ করে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করবে এবং আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।’
বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েটির বাবা দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি করেন। এর আগে এ ঘটনায় দিহানসহ চার জনকে আটক করে কলাবাগান থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুধু দিহানকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
দিহানকে শুক্রবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে আদালতে নেয়া হয়। তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করেন।
আবেদনের পর দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তাকে আদালতে নেয়া হয়। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।