ভাই ওবায়দুল কাদের ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার পরও থামছেন না আবদুল কাদের মির্জা। পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসা এই মেয়র প্রার্থী বলেছেন, এই নির্বাচনকে তিনি নিয়েছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে।
কাদেরের ভাইয়ের অভিযোগ দলের একাংশের বিরুদ্ধে। বলেছেন, অন্য নির্বাচনী এলাকা থেকে এসে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পোস্টার বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর লোকেরা ছিঁড়ছে না, ছিঁড়ছে ফেনী ও মাইজদী থেকে পাঠানো গুন্ডাপান্ডারা। যারা অস্ত্র পাঠিয়েছেন, তারা এগুলো করছেন আমাকে উত্ত্যক্ত করতে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলেছি, বলব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।’
প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে লেগেছে বলে দাবি কাদেরের ভাইয়ের। বলেন, ‘তারা আমার বিরুদ্ধে। কারণ, আমি তাদের গোমর ফাঁস করে দিয়েছি।’
- আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে কাদেরের ভাই কেন আন্দোলনে
ভোটের প্রচারে বৃহস্পতিবার বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন কাদের মির্জা। বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনার শাহদাত হোসেন চৌধুরী সাহেবকে বলেছি, নিরপেক্ষ ভোট করে দেয়ার জন্য।’
কাদের মির্জা নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার তিন বারের মেয়র। ১৬ জানুয়ারির ভোটে আবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। গত রোববার বসুরহাটে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি নিয়ে রাজপথে অবস্থান আর ‘বিপ্লবী’ বক্তব্য দিয়ে তিনি মনযোগ কেড়েছেন।
- আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ে মুগ্ধ রিজভী
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই সেদিন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন চার জন ছাড়া কোনো এমপি ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এমপিরা সেখানে সন্ত্রাস লালন করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ছোট চাকরিতেও ঘুষ খান।
বিএনপি প্রশংসা করছে কাদের মির্জার। বলছে, তারা যে ভোটে কারচুপির অভিযোগ আনেন, সেটা প্রমাণ হয়েছে কাদেরের ভাইয়ের বক্তব্যে।
ওবায়দুল কাদের নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বুধবার দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে পার পাবেন না কেউ।
ভাইয়ের এই হুঁশিয়ারির পরও থামছেন না কাদের মির্জা। বলেন, ‘আমি এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। বহিষ্কার করলে সে দিনের মতো সেখানে (জিরো পয়েন্ট) গিয়ে শুয়ে থাকব। কেউ সঙ্গে না গেলে একা থাকব।’
চাকরি নিতে ঘুষের যে অভিযোগ গত রোববার তোলেন কাদের মির্জা সেটিরও পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।
বলেন, এক জন পুলিশ কত টাকা বেতন পায়? চাকরি নিতে তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়। এক জন স্কুলের পিয়নকে চাকরি নিতে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়। সর্বত্র অনিয়ম।
গরিব মানুষ সরকারি অফিসে গেলে দুই-তিন হাজার টাকা দিতে হয় অভিযোগ করে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় কেউ কেউ আমাকে বলে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসতে। আমি কি পাগল হয়ে গেছি?’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য থামাবেন না জানিয়ে কাদের মির্জা বলেন, তিনি এখন শত্রু হয়ে গেছেন। বলেন, ‘কবিরহাটে আমাদের কর্মীদের দিকে তাকানো যায় না। চার-পাঁচজন সব লুট করে খাচ্ছে। এই কথাগুলো আমি বললে অপরাধ। বলা যাবে না, আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র পাঠায়।’
- আরও পড়ুন: কাদেরের ভাই বলে প্রচার বেশি: হাছান
হুমকি দিয়ে লাভ হবে না জানিয়ে বলেন, কারাগারকেও ভয় পান না তিনি। বলেন, ‘আমি ’৮২ সাল থেকে জেল খেটেছি। তিতা হয়ে গেছি জেল খাটতে খাটতে। এগুলোকে ভয় পেয়ে লাভ নাই।...আর মেরে ফেলবেন? সেটা শেষ।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রশাসন আজ মনে করে শেখ হাসিনাকে আমরা বানাইছি, যা ইচ্ছা তা করব। রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির বিচার হয়, এতে মানুষ খুশি। কিন্তু প্রশাসনের লোক যে এটার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হয় না।’