মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিরপদ প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর উদ্যোগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আরোহণের দুই বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে এ ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে টানা সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিলের পর আশির দশক থেকেই নানা সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের আগস্টে হয় সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ। সব মিলিয়ে দেশে অবস্থান করছে সাড়ে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা, যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
চুক্তি করে এবং একাধিক তারিখ দিয়েও প্রত্যাবাসন শুরু না করায় নেপিদোকে গত ১ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরু করতে একটি চিঠি দিয়েছে ঢাকা।
রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে। সেখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই দফায় দুই হাজারের বেশি মানুষকে কক্সবাজার থেকে সেখানে নেয়া হয়েছে।
এই স্থানান্তরের পর আন্তর্জাতিক মহলে আবার রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন এমনকি জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধিতা করার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা। এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ভাসানচরের দিকে না তাকিয়ে মিয়ানমারের দিকে নজর দিতে জাতিসংঘকে পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
‘কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য ভাষাণচরে ১ লাখ মানুষের বসবাসোপযোগী উন্নতমানের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে শুধু স্ব-ইচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাঠানো হচ্ছে।’
ভাষণে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব আজ চোখে পড়ার মতো বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতা প্রণীত বৈদেশিক নীতির এই মূলমন্ত্রকে পাথেয় করে আমরা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে এই মুহূর্তে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।’’