বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউরোপের কথা বলে শ্রীলংকার জঙ্গলে

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৫:৩৯

উচ্চ বেতনে চাকরির কথা বলে ভ্রমণ ভিসায় নেয়া হয় ভারতে। সেখানে যাওয়ার পরেই ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু ততক্ষণে আর কিছু করার থাকে না। সেখানে নির্যাতন করে স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণ। টাকা নিয়েও ছাড়া হয় না। নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীলংকায়।

ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করার ঘটনায় চার জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের আরও কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সন্দেহভাজনদের বিষয়ে তথ্য জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগীদের কয়েক জন। তারাও জানান কী ধরনের দুর্গতির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সিআইডি কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করা নিয়েপ্রেস ব্রিফিং করছে সিআইডি। ছবি: নিউজবাংলা

জানানো হয়, ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই চক্রটি ভুক্তভোগীদেরকে নিয়ে ছেড়ে দেন শ্রীলংকার জঙ্গলে।

সেখানে উপস্থিত ভুক্তভোগীদের এক জন আহসান হাবিব। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার হাতুড়া বাড়ি গ্রামে। তিনি মানব পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে খুইয়েছেন ১২ লাখ টাকা। জানান, টাকা ও তার শোকে মারা গেছেন বাবা।

হাবিব টাকা দিয়েছিলেন মামুনুর রশিদ মামুন নামে এক জনকে। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই নবীনগর উপজেলার ওয়ারু গ্রামে। তার তিন সহযোগী হলেন হাবিবুর রহমান, জামাল হোসেন ও নাহিদুল ইসলাম পলাশ।

হাবিবুরের বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের নুরজাহানপুর গ্রামে। জামালের বাড়ি ঢাকার উত্তরার চার নম্বর সেক্টরে। নাহিদুলের বাড়ি ঢাকার উত্তরখানে।

আন্তর্জাতিক একটি মানব পাচারকারী চক্রের আটক চার সদস্য। ছবি: নিউজবাংলা

সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুক জানান, গ্রেপ্তার এই চার জন আন্তর্জাতিক একটি মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য।

এরা মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি মিশর এমনকি বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মালদ্বীপ, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় বেতনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লোক সংগ্রহ করে।

তারা প্রথমে ভিজিট ভিসায় সড়ক পথে ভারতে পাঠায়। সেখানে ভুয়া ভিসা দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে নানা ভাবে টাকা সংগ্রহ করে।

ভারতে গিয়েই প্রতারিতদের মধ্যে যারা তাদের দুর্গতি বুঝতে পেরে নতুন করে টাকা দিকে অস্বীকৃতি জানায়, তাদেরকে করা হয় নির্যাতন। এরপর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আদায় করা হয় মুক্তিপণ।

ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। ছবি: নিউজবাংলা

তবে নতুন করে টাকা নিয়েও তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে শ্রীলংকা নিয়ে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে কেউ ফিরতে পারে, কেউ পারে না।

সিআইডি জানায়, এই চক্রে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের কিছু লোক জড়িত। তারা দেশে ঘন ঘন অফিস ও মোবাইল নম্বর বদল করে। প্রতারিত সাধারণ মানুষদের মধ্যে অনেকেই তাদের হদিস পায় না।

ঘটনাক্রমে দেশে ফিরে আসা কয়েক জন সিআইডির কাছে অভিযোগ জানালে সংস্থাটির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি দল তদন্তে নামে। আটক করা হয় চার জনকে।

তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির ২৮টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দূতাবাস, ব্যাংক ও এজেন্সির ১৯টি সিলমোহর এবং কম্বোডিয়ার ১০টি জাল ভিসা উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগী আহসান হাবিবের দুর্গতি

ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত থাকা এই যুবক নিউজবাংলাকে জানান তার কাহিনি।

তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেখানে পরিচয় হয় গ্রেপ্তার হওয়া মামুনের সঙ্গে। মামুন তাকে একই জেলার বাসিন্দা বলে কম খরচে ইউরোপে নেয়ার প্রস্তাব দেয়।

জানানো হয়, মাল্টায় গেলেই দেড় লাখ টাকা বেতনের চাকরি। উন্নত জীবন, ভবিষ্যত নিশ্চিত।

হাবিব ভাবেন জীবন যাবে পাল্টে। ফাঁদে পড়ে যান।

‘মামুন বলে আমাদের বাড়ি যেহেতু পাশাপাশি থানায় আর আমি একটা এজেন্সিতে চাকরি করি, তুমি আমার সঙ্গে দেখা করো। পরে আমি আর দেখা করি নাই। কিছুদিন পরে মামুন আবার আমার কাছে আসে। আমাদের ১২ লাখ টাকায় চুক্তি হয়।

‘রাজি হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সে আমার পাসপোর্ট নিয়ে ইন্ডিয়ার ভিসা করে। এর তিন থেকে চার দিন পরে আমি আমার বাবা সাক্ষীসহ মামুনের অফিসে আট লাখ টাকা জমা দেই। মামুনের অফিস থেকে আমাকে নিয়ে যায় জামালের অফিসে। জামালের অফিস থেকে আমাকে টিকিট, পাসপোর্টসহ যাবতীয় সব কিছু বুঝিয়ে দেয় ইন্ডিয়া যাওয়ার উদ্দেশে। তখন তারা বলে ইন্ডিয়া থেকে মাল্টার ভিসা করে দেবে।’

হাবিব জানান, তাকে বিআরটিসি বাসে করে কমলাপুর থেকে বেনাপোলে নেয়া হয়। সেখানে আরেক দালালের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেই দালাল নিয়ে যান কলকাতা। এক দিন পর হায়দ্রাবাদের ট্রেনে তুলে দেয়া হয়।

হায়দ্রাবাদ নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পাশাপাশি হাবিবের বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চার লাখ টাকা নেয়া হয়।

হাবিব জানান, তার মতো আরও অনেক লোক ছিল সেখানে। তাদের কাছ থেকেও একইভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে।

হায়দ্রাবাদ থেকে আরেক দল দালাল ট্রলারে করে তাকে নিয়ে যায় শ্রীলংকায়।

‘শ্রীলংকা যাওয়ার পরে সেখানে আমার মতো ২৫ থেকে ২৬ জনকে দেখতে পেলাম। সেখানে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, তাদেরকেও নির্যাতন করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে’, বলেন হাবিব।

সেখান থেকে কোনো রকমে শ্রীলংকার স্থানীয় এক লোককে তার জীবন কাহিনি খুলে বলেন আহসান হাবিব। পাশাপাশি দেশে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমান ভাড়ার টাকা নেয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে শ্রীলংকা এয়ারলাইন্সে করে দেশে ফেরেন।

‘কেউ লোভে পড়বেন না’

আহসান হাবিব ভেবেছিলেন বিদেশে জীবন সহজ। কিন্তু কতটা কঠিন, সেটি তিনি নিজ চোখে দেখে এসেছেন।

এখন মনে উপলব্ধি জন্মেছে। পরামর্শ দিয়েছেন কেউ যেন তার মতো ভুল না করে।

‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে বলতে চাই কেউ দালালের হাতে পড়বেন না’- বিদেশে গেলে বৈধ পথে যাওয়ার চেষ্টার পরামর্শ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই যুবক।

আহসান হাবিব বিদেশে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন তার বাবা। এই যুবকের ধারণা, তার শোকেই গেছে বাবার প্রাণ। এটা তার জীবনের বড় কষ্ট হয়ে থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর