বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়ে হলেই উপহার পুলিশ কর্মকর্তার

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:২৭

‘গ্রাম এলাকায় দেখেছি মেয়ে হলে অনেকেই মন খারাপ করেন, একমাত্র সন্তান মেয়ে হলেও খুশি হন না। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের সমাজে প্রাপ্য সম্মান ও সুযোগ দেয়া হয় না। সবাইকে উৎসাহিত করতে ও ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার নিশ্চিতের বিষয়টি জানাতেই আমার এ উদ্যোগ।’

টাঙ্গাইলের কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন দুই সন্তানের বাবা। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। দুই জনের মধ্যে বিভেদ করেন না। কিন্তু মেয়েদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক মনোভাব তাকে পীড়া দেয়। এ থেকে কিছু একটা করার তাগিদ থেকে করলেন অভিনব এক কাণ্ড।

কারও কন্যা সন্তানের জন্ম হলেই উপহার পাঠাচ্ছেন তিনি। গোপনে নয়, রীতিমতো প্রচার চালিয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন, কোথায় জন্ম হয়েছে একটি কন্যার।

ফেস্টুন নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টের ছবি

নিউজবাংলাকে এই কর্মকর্তা জানান, পেশার কারণে বিভিন্ন জায়গায় তদন্তের সময় দেখেছেন কন্যা সন্তান নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন অনেকেই। মেয়েদের বোঝা না ভেবে যাতে আশীর্বাদ মনে করা হয়, সে জন্যই এই উদ্যোগ তার।

‘কন্যা সন্তান বোঝা নয় আশীর্বাদ, কন্যা সন্তান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা সন্তান জন্ম হলে ফোন করুন উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথে’-এ স্লোগানে মঙ্গলবার ওই পুলিশ কর্মকর্তা কাগমারীর বিভিন্ন জায়গায় ফেস্টুন টানিয়েছেন। ফেস্টুনে দেয়া তার ফোন নম্বরে কল করার আহ্বান জানানো হয়েছে কন্যা সন্তানদের অভিভাবকদের।

স্থানীয় সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী বলেন, ‘আমি কাগমারী পুলিশ ফাঁড়িতে একটি কাজে যাই। সেখানে ইনর্চাজের রুমে ঢুকেই দেখি ফেস্টুন। লেখা দেখে ভালো লাগায় ছবি তুলে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করি। অল্প সময়ের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।’

স্থানীয় একজনের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। ছবি: নিউজবাংলা

এরপর থেকেই মোশারফ হোসেনের ফোনে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কল আসতে থাকে। এমনকি কল এসেছে দেশের বাইরে থেকেও। অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানান ও উৎসাহী হয়ে তাদের ঠিকানা দেন।

উপহার পাওয়া মাসুদা খাতুন বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার এমন ব্যতিক্রমী কাজের খবর জেনে ও যোগাযোগ করে পুরস্কার নিতে এসেছি। পুরস্কার পেয়ে আমি আনন্দিত। মেয়েকে পেয়ে আমি ও আমার স্বামী খুবই খুশি।’

স্থানীয় গোলাম রাব্বানী রাসেল বলেন, ‘আমি দুই মেয়ের বাবা। দ্বিতীয় সন্তান কন্যা হওয়ায় আমার কোন দুঃখ বা কষ্ট নেই। মোশারফ সাহেবের কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ায় আমার পরিবারের সবাই খুশি।’

পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গ্রাম এলাকায় দেখেছি মেয়ে হলে অনেকেই মন খারাপ করেন, একমাত্র সন্তান মেয়ে হলেও খুশি হন না। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের সমাজে প্রাপ্য সম্মান ও সুযোগ দেয়া হয় না। সবাইকে উৎসাহিত করতে ও ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার নিশ্চিতের বিষয়টি জানাতেই আমার এ উদ্যোগ। আমি আমার সামর্থের মধ্যেই চেষ্টা করছি মানুষকে উপহারের মাধ্যমে এই বার্তা দেয়ার যে, মেয়েরা কোনো অংশেই কম নয়।’

উপহার হিসেবে দেয়া ক্রেস্ট। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি জানান, গতকাল ফেস্টুন টানানোর পর দেশ-বিদেশের অনেকের কাছে থেকেই সাধুবাদ পেয়েছেন তিনি। বুধবার পাঁচটি পরিবারকে উপহার দেয়ার মাধ্যমে তার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মোশারফের দেয়া উপহারের মধ্যে রয়েছে একটি ক্রেস্ট, একটি লোশনের বোতল ও এক প্যাকেট ডায়াপার।

আপাতত উপহার কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার মানুষদের দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইনচার্জ মোশারফ।

এ বিভাগের আরো খবর