আগের বছরের তুলনায় করোনাকালে সড়কে মৃত্যু কিছুটা কম বটে, তবে মৃত্যুর সংখ্যায় এমন কোনো পার্থক্য নেই যা আলোচিত হতে পারে। তবে দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। আগের বছরের চেয়ে করোনাকালে দুর্ঘটনা কম হয়েছে সাতশরও বেশি।
২০১৯ সালের সড়কে মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ হাজার ২২৭ জনের। বিদায়ী ২০২০ সালে সেটা চার হাজার ৯৬৯ জন। অর্থাৎ মৃত্যু কমেছে ২৫৮ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে মোট চার হাজার ৯২টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয় পাঁচ হাজার ৮৫ জন।
আগের বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল চার হাজার ৭০২টি। আহত ছয় হাজার ৯৫৩ জন।
এই পরিসংখ্যানটি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন-নিসচার। যাদের ধারণা, মৃত্যু কমার কারণ করোনাকালে সাধারণ ছুটিতে মানুষের যাতায়াত কমা।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। আগস্ট পর্যন্ত থাকে সে পরিস্থিতি। এ সময় সড়কে যানবাহন চলেছে কমই। তার পরেও মৃত্যু থেমে ছিল না।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি এই পরিসংখ্যানটি বুধবার প্রকাশ করে নিসচা। জাতীয় প্রেসক্লাবে নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন তা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জে বাসের ধাক্কায় এই অটোরিকশার সাত জন যাত্রী নিহত হয়েছেন
এ সময় জানানো হয়, গত বছর রেলপথের দুর্ঘটনায় ১২৯জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে। নৌপথের দুর্ঘটনায় ২১২ জন নিহত ও ১০০ জন আহত বা নিখোঁজ হন।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে বেশি ৪৪৭টি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এই মাসে ৪৯৫ জন নিহত ও ৮২৩ জন আহত হয়।
আর এপ্রিল ও মে মাসে সবচেয়ে কম যথাক্রমে ১৩২ ও ১৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর পেছনের কারণ হিসেবে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে লকডাউন থাকায় দুর্ঘটনা কম হয়েছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ এলাকায় বেশি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এলাকায় কম দুর্ঘটনা ঘটে।
তার মতে, এসব এলাকায় চালকরা তুলনামূলক কম গতিতে নিয়ন্ত্রণে রেখে যানবাহন চালানোর কারণে দুর্ঘটনা কম হয়েছে।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্স
২০২০ সালে মাসওয়ারি দুর্ঘটনার হিসাব করলে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ৪৪৭ দুর্ঘটনায় ৪৯৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৫ দুর্ঘটনায় ৪৩৭ জন, মার্চে ৩৭৯ দুর্ঘটনায় ৪৫৪ জন, এপ্রিলে ১৩২ দুর্ঘটনায় ১৩০ জন, , মে মাসে ১৯৬ দুর্ঘটনায় ২৪২ জন, জুনে ২৬০ দুর্ঘটনায় ৩৩০ জন, জুলাইয়ে ২২০ দুর্ঘটনায় ২৮৪ জন, আগস্টে ৩৪০ দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জন, , সেপ্টেম্বরে ২১৬ দুর্ঘটনায় ২৫০ জন, অক্টোবরে ২৩০ দুর্ঘটনায় ২৬২ জন, নভেম্বরে ২৬২ দুর্ঘটনায় ৩১৬ জন এবং ডিসেম্বরে ৩৬৩ দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, টাস্কফোর্সের ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।