রোহিঙ্গাদের যেখানে-সেখানে যাওয়া-আসা ঠেকাতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দ্রুততার সঙ্গে সেটি তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বুধবার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেন যত্রতত্র যেতে না পারে। অন্য রকম সিচুয়েশন যাতে তৈরি না হয়। সেখানে (ক্যাম্প) একটা ওয়াকওয়ে থাকবে।’
কামাল জানান, সভায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প, প্রত্যাবাসন, নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তায় পুলিশ বাহিনী সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে তারা বিজিবি ও র্যাবের সহযোগিতা নিতে পারবে।
কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শেষ হলে সেনাবাহিনীকে নতুন করে কোনো দায়িত্ব দেয়া যায় কি না, সে বিষয়েও পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দুইটি এপিবিএন বাহিনী তৈরি করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাদক একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ক্যাম্পে থাকা অনেকে মিয়ানমার গিয়ে ইয়াবা মাদক নিয়ে আসে। লাভ- লোকসানের হিসেবে সেখানে কলহ, খুনাখুনি হচ্ছে। এটা যাতে না বাড়ে তাই রাতে-দিনে পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে।’
ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে আমরা যে নিয়ে যাচ্ছি তাদের সম্মতিতে। তিন হাজার গেছে। যারা যেতে চাইবে তাদের সবাই যেতে পারবেন সেই ব্যবস্থা করা আছে।’
মন্ত্রী জানান, ভাসানচরে থানা ও ফায়ার স্টেশন করা হয়েছে। উৎসুক জনতা যেন সেখানে গিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি না করে সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ১৮০টি এনজিও কাজ করছে। আর ভাসান চরে ২২টি এনজিও কাজ করছে।
এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন না থাকায় কিছুসংখ্যক এনজিওর কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সভায় যেখানে বনায়ন ধ্বংস হয়েছে, সেখানে বনায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল কাজ তাদের ফিরিয়ে দেয়া। তাদের প্রত্যাবাসনে যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফিরিয়ে দেয়া আমাদের মূল লক্ষ্য।’
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, চীন, জাপান ও জার্মানির সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলাপ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। বেশ কিছু কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে আসেনি।
মিয়ানমার নানা সময়ে কথা দিলেও সে অনুযায়ী কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রচেষ্টা চলছে।
‘আমরা চাই জাতিসংঘে পিএম (প্রধানমন্ত্রী) যে সুপারিশ দিয়েছে সেই মোতাবেক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হক।’
সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আশাবাদী জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাই, ট্রাই, মাল্টি লেটারেল বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে।’