বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডাকটিকিটে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০৩:১০

এ নিয়ে ফেসবুকে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। বলা হচ্ছে, ‘তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পালনের কী হবে?’, ‘রক্ত দিয়ে কেনা নাম, মশকরা করার জন্য নয়’, ‘এখন কি ইতিহাস রক্ষার জন্য আমরা বাংলাদেশের নামের জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান ইউজ করবো?’,

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ৪ জানুয়ারি একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। বলা হচ্ছে, ‘তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশবছর পালনের কী হবে?’, ‘রক্ত দিয়ে কেনা নাম, মশকরা করার জন্য নয়’, ‘এখন কি ইতিহাস রক্ষার জন্য আমরা বাংলাদেশের নামের জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান ইউজ করবো?’, ‘তাহলে আমরা এখনও পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা???’।

এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করা হচ্ছে।

ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ডাক ভবনে এক অনুষ্ঠানে স্মারক ডাকটিকিটটি অবমুক্ত করেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নিজেই।

এরপর এদিন দুপুর ২টা ২৬ মিনিটে নিজের ফেসবুকে স্মারক ডাকটিকিটটির একটি ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে আজ।’

এর দুই মিনিট পর দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে তিনি ছবিটি কাভার ফটো হিসেবেও আপলোড করেন। সেখানে এমন ডাকটিকিট করার কারণ জানতে চেয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আমরা কি পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি?’, ‘‘পুনরায় 'মুসলিম' শব্দটি সংযোজন করা কতটুকু যুক্তি-যুক্ত?’’।

এসব প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন মন্ত্রী জব্বার।

মন্ত্রীর পোস্ট করা ছবিতে শশীমোহন রায় নামে এক জন বলেছেন, ‘‘স্যার 'মুসলিম ছাত্রলীগ' থেকে মুসলিম শব্দটা বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পুনরায় লেখার কারণে কি সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পাচ্ছে না? কিংবা কেবলমাত্র একটি সম্প্রদায়কে বড় করে দেখানো হচ্ছে না? যদিও বর্তমান ছাত্রলীগে অসংখ্য সনাতনী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তাই পুনরায় 'মুসলিম' শব্দটি সংযোজন করা কতটুকু যুক্তি-যুক্ত? ধৃষ্টতা হলে মার্জনা করবেন।’’

এই মন্তব্যের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি ডাক টিকেট-ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ নাই-এটা মোটেই সাম্প্রদায়িকতা নয়। সাম্প্রদায়িকতা আপনার অন্তরে।’

জেসমিন ইসলাম মোহনা নামে এক জন মন্ত্রীর পোস্ট করা ছবিতে লেখেন, ‘আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুসলিম শব্দটা বহু আগে ছাত্রলীগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে এই শব্দ সংযোজনের কারণ কি? আমরা কি পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি?

মন্ত্রী এর উত্তরে বলেন, ‘ডাক টিকেট ইতিহাসকে ধারণ করে। ভাবুন যদি লিখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন-তবে কতোটা সত্য আপনার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন? মুসলিম লেখায় সাম্প্রদায়িকতা নেই-তখনকার প্রয়োজন ছিলো এটা- সেটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। পরে তিনিই বাদ দেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ করিনি? -ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হীমন্যতা ও অপরাধ। সত্য যা তাকে মোকাবেলা করুন।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কবি জাফর ওয়াজেদ তার ফেসবুক ওয়ালে ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ হতে পূর্বপাকিস্তান শব্দটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে ক্রমশ অপসৃয়মান হয়ে আসে৷ একাত্তরে পুরোপুরি মুছে যায়৷ কিন্তু যেসব নেতাকর্মী পূর্বপাকিস্তানকালের, তারা সেই ধারা বহন করতেই পারেন অন্তরঙ্গে৷ তার প্রতিফলন যে ঘটানো হবে ডাকটিকিটে, বিস্ময়কর বৈকি৷ অই শব্দটি মুছে গেলে তাদের নামগন্ধ মুছে যেতে পারে, সেই আশংকায়ও হয়তো৷ তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ জুনে বাহাত্তর বছর পালন করবে? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশবছর পালনের কী হবে? গোলমাল লাগছে৷’

পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘গোলাম আযমের পূর্বপাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প থমকে নেই৷ অতঃপর পূব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের প্রতিষ্ঠার ৭২বছর হবে?’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর এই ডাকটিকিটের জবাবে তার ফেসবুকে ছাত্রলীগের একটা পরিচয় তুলে ধরেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (১৯৪৮), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ (১৯৫৩), ছাত্রলীগ (১৯৭১), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (১৯৭২), জাতীয় ছাত্রলীগ (১৯৭৫), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (১৯৭৬-বর্তমান)। এইভাবে বারবার বিবর্তিত হয়েছে কিংবদন্তী এই ছাত্র সংগঠন। রক্ত দিয়ে কেনা নাম, মশকরা করার জন্য নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত গোলাম ইসতেজা চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটা ভুল? কোনভাবেই ভুল না। যে ডিজাইন করেছে, যে অনুমোদন দিয়েছে সবাই জেনে বুঝে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। সাধে কি বলি যে, আওয়ামী লীগ সবাই হতে পারে কিন্তু ছাত্রলীগ সবাই হতে পারে না। ছাত্রলীগের রাজনীতি না করা এইসব আওয়ামী লীগাররা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ কোনো কিছু ধারণ করে না, করতে পারে না। তাদের ধ্যান জ্ঞান রাজনীতি বাণিজ্য’।

সাইদুল ইসলাম নামে এক জন ফেসবুকে ডাকটিকিটটির ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘এইটাকে ঠিক কীভাবে ইতিহাস রক্ষার কাজ বলা যায়? মন্ত্রী সাহেব ঠিক কোন এঙ্গেলে ভাবেন? যেটা আমরা ধরতে পারি না? আসেন ইতিহাস রক্ষা কেমনে করতে হয় শিখাই- ওই আমলের একটা ডকুমেন্ট যেখানে সংগঠনের পূর্বের নাম ছিল সেটা দিয়ে খাম প্রকাশ করতেন, তখন সেটা ইতিহাসের অংশ হতো। ইতিহাসতো বলে বাংলাদেশের নাম "পূর্ব পাকিস্তান" ছিল, এখন কি ইতিহাস রক্ষার জন্য আমরা বাংলাদেশের নামের জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান ইউজ করবো?’

সাদ্দাম হোসেন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘৪ জানুয়ারি ২০২১ পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী!!!!!?? তাহলে আমরা এখনও পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা??? ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন কেউ আছেন? আসলে ঘটনা কী??’

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে রেখেছে অনন্য ভূমিকা।

প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা উত্তর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা গৌরবের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, ‘মোস্তাফা জব্বার জাসদ করতেন। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের বিভক্তির মধ্য দিয়ে জাসদের আত্মপ্রকাশ। ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধু সমর্থক অংশটিকে তারা মুজিববাদী নামে ডাকত। মন্ত্রী এখন হয়তো ভেবে থাকতে পারেন, তাদের অংশটিই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আর মূল অংশটি পাকিস্তান ছাত্রলীগ। এমন ধারণা থেকে মন্ত্রীর ভুল করার অবকাশ আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর