জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের একার পক্ষে মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ও সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) ১৩তম সম্মেলনের আগে এ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শমূলক ভার্চুয়াল সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আগামী ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে জিএফএমডির সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক করতে মঙ্গলবার হয় ভার্চুয়াল সভা।
বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়দাতা দেশ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। প্রতিবছর এ কারণে আমাদের জনসংখ্যার একটি বিশাল সংখ্যা বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাক্কলন অনুসারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে আড়াই থেকে তিন কোটি মানুষ তাদের বসতবাড়ি হারাবে।
‘এ অবস্থায় বাংলাদেশের একার পক্ষে রোহিঙ্গাদের মতো এত বিশাল উৎপীড়িত জনগোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর এবং সক্রিয় সমর্থন প্রয়োজন।’
অভিবাসীরা কখনই বোঝা নয়- এটাও মনে করিয়ে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা (অভিবাসী) বিকাশের অংশীদার, সৃজনশীলতার চালিকা এবং নতুনত্বের প্রেরণা। তারা রাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।’
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প
সভায় আব্দুল মোমেন জানান, জিএফএমডির শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা বিষয়ক ছয়টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব থিম করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
অভিবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধারাবাহিক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মেও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।’
মহামারির সময়ে প্রবাসী শ্রমিকদের সংকটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনেক অভিবাসী শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন এবং নানান সমস্যায় পড়েছেন। কারণ তারা প্রবাসে সামাজিক সুরক্ষা জালের সুরক্ষা পাননি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও অভিবাসীদের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।’
প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে জিএফএমডির মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।