এবার মদ পানের মামলায় জামিন পেয়েছেন ঢাকা-৭ এর সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের ছেলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বহিষ্কৃত কাউন্সিলর ইরফান সেলিম।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভাস্কর দেবনাথ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। গত ২৬ অক্টোবর ভ্রাম্যমাণ আদালত মামলায় তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল।
ইরফান সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলাম। মাদক সংক্রান্ত অভিযোগের সাজায় আজ জামিন দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভাস্কর দেবণাথ। ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় ইরফানকে এই জামিন দেয়া হয়।’
প্রাণনাথ জানান, ওয়াকিটকি রাখার মামলায় এর আগে ৩ জানুয়ারি জামিন পেয়েছেন ইরফান সেলিম। এ মামলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মামলা। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া দুটি মামলায় (ওয়াকিটকি রাখা ও মদ পান) তিনি জামিন পেয়েছেন। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের মামলায় তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদের করা ধানমন্ডি থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তিতে আর বাধা থাকবে না।’
নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খানকে মারধরের ঘটনায় ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। অন্য আসামিরা হলেন, হাজী সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দীপু, গাড়িচালক মিজানুর রহমান এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই তিন জন।
বিশেষায়িত বাহিনীর ব্যবহার করা এই ব্রিফকেস ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার বা আমদানির সুযোগ নেই। এটি পাওয়া যায় সেলিমপুত্রের কাছে। ফাইল ছবি
মামলায় বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিফ আহমদের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় হাজী সেলিমের ছেলের গাড়ি। ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে পেছন পেছন এলে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিফ আহমদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করেন।
পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। পুলিশ হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও গাড়ি জব্দ করে।
পরদিন ২৬ অক্টোবর দুপুরে র্যাব পুরান ঢাকায় চকবাজারে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে ইরফানের ঘর থেকে লাইসেন্সহীন পিস্তল, এয়ারগান উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব। ঘরে পাওয়া যায় মদের বোতল।
এ ছাড়া অনুমোদনহীন ওয়াকিটকি ও এসএসএফ ব্যবহার করে এমন ব্রিফকেস পাওয়া যায়।
মদ পান ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখায় তাৎক্ষণিকভাবে ইরফানকে মোট দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
ওয়াকিটকিগুলো ভিপিএস দিয়ে যুক্ত থাকত, র্যাবের অভিযান সেগুলো পাওয়া যায়। ফাইল ছবি
ওই দিন ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয় র্যাব। পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি করে মোট চারটি মামলা করে র্যাব।
গত ৪ জানুয়ারি অস্ত্র ও মাদক মামলায় ইরফান সেলিমকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ইরফানের কাছে নয়, অস্ত্র ও মাদক পাওয়া যায় তার সহযোগী জাহিদের কাছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তে সেলিমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
‘এ জন্য ইরফানকে অব্যাহতি দিতে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে তার দেহরক্ষী জাহিদুলের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেব।’