বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কওমিতে বাড়ছে ইংরেজি চর্চা

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:৩৪

ইংরেজি হারাম ফতোয়াটি ব্রিটিশ বিতারণের প্রেক্ষাপটে দেয়া হয়েছিল। ইংরেজি ভাষা এসেছে ইংরেজদের কাছ থেকে। তারা এ দেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছিল। তারা জুলুম করে এ দেশের মানুষের ওপর ইংরেজি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের আচরণের কারণে ইংরেজি ভাষার প্রতি মুসলমানদের বিরাগ ছিল: কওমি শিক্ষক মুহাম্মদুল্লাহ ইয়াহইয়া

‘মাদ্রাসার ছাত্ররা ইংরেজি পারে না বাক্যটি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। আমরা শুধু ইংরেজি শিখবই না, বরং যারা বেশি বেশি ইংরেজি পারে বলে দাবি করে তাদের সাথেও পাঞ্জা লড়ব। এ জন্য আরবির সঙ্গে মিল রেখে ফুল ইংরেজি স্পোকেন কোর্স নিয়ে আসা হয়েছে।’

কওমি ছাত্রদের ইংরেজি শেখাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কওমি ঘরানার একটি অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞাপন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এর উদ্যোক্তা জুবায়ের আহমেদ নামের এক জন। পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। এখন ইংরেজি শেখানোটিই তার আয়ের উৎস।

নিউজবাংলাকে জুবায়ের জানান, তার এই কোর্স নিয়ে কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়ারা ব্যাপক উৎসাহী। যদিও সেখানে সাধারণ শিক্ষার ছাত্ররাও পড়ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মোট ১৫০০ ছাত্র ইংরেজি কোর্স করছে, যাদের অর্ধেক ছাত্র মাদ্রাসার…ঢাকার উত্তরায়, মিরপুর ও পল্টনে আমাদের শাখা আছে। এ ছাড়া অনলাইনে ক্লাস হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওখানেও আমাদের ক্লাস হয়। তবে করোনার কারণে এখন সেটা বন্ধ আছে।’

কওমি মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষার চল খুব বেশি আগের কথা নয়। গত এক দশকে এর শুরু।

এর আগ পর্যন্ত ইংরেজিকে কেবল উপেক্ষা নয়, এর বিরোধিতাও করেছে কওমি ঘরানার আলেমরা। ইংরেজি শিক্ষাকে হারামও বলা হয়েছে। যদিও ইদানীং বেশ জোর দেয়া হচ্ছে। আরবির পাশাপাশি ইংরেজিতে সমান জোর দিয়েও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব পাল্টানোর কারণ অবশ্য দুনিয়াদারি। কওমি সনদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পর সরকারি চাকরির দুয়ার খুলেছে। তাই নিজেদের ঝালাই করে নিতে হয়।

আবার ইদানীং কওমি শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্য প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবেও ইংরেজি শিক্ষায় তৈরি হয়েছে ঝোঁক।

রাজধানীর লালবাগের জামে হুমেনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটরা মাদ্রাসার ছাত্র রিয়াদ মির্জা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে ইংরেজিতে আগের থেকে সবাই দক্ষ। অনেকেই ইংরেজিতে কথা বলতে চায়। অনেকেই কথা বলার সময় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে, যা আগে ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে মানুষের মানসিকতাও পাল্টাচ্ছে। বর্তমান যুগে ইংরেজি ছাড়া চলা প্রায় অসম্ভব। এটা মাদ্রাসার ছাত্ররা দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে।’

ঢাকার রামপুরা ঝিলপারের জামিয়া ইকরা নাম কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক মুহাম্মদুল্লাহ ইয়াহইয়া জানান, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ কোর্স ‘দাওরায়ে হাদিসকে’ মাস্টার্সের সমমান দেয়ার পর এই প্রবণতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটা অস্বাভাবিক না। নামাজ, রোজা আদায়ের পাশাপাশি হালাল রুজি অন্বেষণও ফরজের মধ্যে পড়ে। সে কারণে ইংরেজির প্রতি মাদ্রাসার ছাত্রদের আগ্রহ বেড়েছে। কারণ চাকরির বাজারে তাকে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়।‘

২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমর্যাদার স্বীকৃতি দেয় সরকার।

বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান আগে হারাম মনে করা হলেও আলিয়া মাদ্রাসায় শুরু থেকেই এগুলোর চল আছে।

পাবনার আমিনপুর উপজেলার আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা নূরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকারি বোর্ডের বই পড়াই। এর পাশাপাশি আরবি ও অন্যান্য ধর্মীয় শিক্ষাও দেয়া হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা ধর্মীয় শিক্ষাটা বেশি পড়ানো হতো। ইংরেজি, গণিত এগুলো ছিল না। তবে ইদানীং তাদের সাধারণ শিক্ষার ধারাগুলোর সঙ্গে ভালোভাবেই পরিচিত করানো হচ্ছে। এখন ওদেরকে আলাদা তালিম দেয়া হচ্ছে।

‘ইদানীং কিন্ডারগার্টেন সিস্টেমের প্রাথমিক শ্রেণিগুলোর মতো কওমি মাদ্রাসায়ও ইংরেজি চর্চা করানো হচ্ছে।’

রাজধানীর উত্তরার দারুল আজহার ক্যাডেট মডেল মাদ্রাসা কওমি মাদ্রাসা হলেও সমন্বিত সিলেবাস অনুসরণ করে। সেখানে আরবির সঙ্গে ইংরেজিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন আহমেদ খন্দকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে দ্বীনি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হতো। এখন সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মানে ইংরেজির ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এখন সকল ক্ষেত্রে ইংরেজির গুরুত্ব বেশি।’

তবে কেবল চাকরির জন্য এই ভাষা শেখা হচ্ছে এমন নয় বলেও দাবি করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা থেকে যারা আলেম হয়ে বের হয়, তাদের কেউ কিন্তু বেকার নেই। ভাষা হিসেবেই এখন ইংরেজির প্রয়োজন হচ্ছে।’

আগে এই ভাষার প্রতি কওমি ঘরানায় কেন বিরাগ ছিল জানতে চাইলে ইয়াহইয়া বলেন, ‘স্থান, কাল, পাত্রভেদে পরিস্থিতির কারণে একটা আইন পরিবর্তন হয়। ইংরেজি হারাম এই ফতোয়াটি ব্রিটিশ বিতারণের প্রেক্ষাপটে দেয়া হয়েছিল।

‘ইংরেজি ভাষা এসেছে ইংরেজদের কাছ থেকে। তারা এ দেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছিল। তারা জুলুম করে এ দেশের মানুষের ওপর ইংরেজি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের আচরণের কারণে ইংরেজি ভাষার প্রতি মুসলমানদের বিরাগ ছিল।’

লালবাগের জামে হুমেনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটরা মাদ্রাসার ছাত্র মুহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘চাকরি ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করতেও আমাদের ইংরেজির প্রয়োজন হয়। ভাষাটি শিখা থাকলে এটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।

‘আমাদের মধ্যে অনেকেই অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারও করেন। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে ভালো সুবিধা পাওয়া যায়। এ জন্যও অনেকে ইংরেজি শিখে থাকেন।’

এ বিভাগের আরো খবর