ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাময়িক বরখাস্ত কমিশনার ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে করা দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরফানকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, ইরফানের কাছে নয়,অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে তার সহযোগী জাহিদের কাছ থেকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তদন্তে সেলিমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ জন্য ইরফানকে অব্যাহতি দিতে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে তার দেহরক্ষী জাহিদুলের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবো।’
ইরফান সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ নিউজবাংলাকে বলেন,‘ইরফান সেলিমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি এখনো জিআর শাখায় জমা পড়েনি।’
নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খানকে মারধরের ঘটনায় ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। অন্য আসামিরা হলেন, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দীপু, গাড়িচালক মিজানুর রহমান এবং অজ্ঞাত আরও দুই তিন জন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিফ আহমদের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় হাজি সেলিমের ছেলের গাড়ি। ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে পেছন পেছন এলে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিফ আহমদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করেন।
পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। পুলিশ হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও গাড়ি জব্দ করে।
পরদিন ২৬ অক্টোবর দুপুরে র্যাব পুরান ঢাকায় চকবাজারের ২৬, দেবীদাস লেনে হাজি সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে ইরফানের ঘর থেকে লাইসেন্সহীন পিস্তল, এয়ারগান উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব। ঘরে পাওয়া যায় মদের বোতল।
এ ছাড়া অনুমোদনহীন ওয়াকিটকি এবং এসএসএফ ব্যবহার করে এমন ব্রিফকেস পাওয়া যায়।
মদ পান ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখায় তাৎক্ষণিকভাবে ইরফানকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
ওই দিন ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয় র্যাব। পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি করে মোট চারটি মামলা করে র্যাব।
এসব মামলায় একাধিকবার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ইরফানকে। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুত্রের এই কাণ্ডের পর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে পুরনো মামলাগুলো সচল হয়েছে। তার দখলে থাকা বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন।