সিরাম ইনস্টিটিউটকে অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা বেচতে ভারত সরকার নিষেধ করার পর করণীয় খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সরকার। কারণ, করোনার টিকার জন্য প্রথমত এই প্রতিষ্ঠানটির ওপরই নির্ভর করে আছে বাংলাদেশ।
ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনার টিকা বিতরণে কোভেক্সের সঙ্গে সরকারের যে আলোচনা, তাতে সোয়া সাত কোটি টিকা আসতে আসতে আগামী জুন-জুলাই লেগে যাবে।
এর আগে তিন কোটি ডোজ টিকা পেতে সিরামের সঙ্গে গত ৫ নভেম্বর চুক্তি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ উৎপাদনকারী দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। তখনও অক্সফোর্ডের টিকার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি, আর ভারত সরকারও এই টিকা বাংলাদেশের কাছে বেচা যাবে না- এমন কিছুই বলেনি। বরং এটা বলা হয়েছে যে, করোনার টিকা এলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাবে বাংলাদেশ।
এর মধ্যে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদনের পর বাংলাদেশ সরকার জানায়, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আসবে এটি। আর প্রথম ধাপে ৫০ লাখ টিকা আনতে চুক্তির অংশীদার বেক্সিমকো লিমিটেড ৬০০ কোটি টাকা সিরামকে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
এর মধ্যে হঠাৎ বজ্রাঘাতের মতো আসে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত। টিকা বিদেশে বেচা যাবে না বলে সিরাম ইনস্টিটিউটকে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। এই খবর আলোড়ন তোলেছে বাংলাদেশে।
সাড়ে তিন মাস আগে আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মতোই টিকা রপ্তানিতে আগেভাগে না জানিয়ে নিষেধাজ্ঞার পর কী করবে ঢাকা? করণীয় খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সরকার।
নিউজবাংলাকে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে নিয়ে বৈঠক করেছেন তারা।
বিকেল তিনটায় সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের। এর আগে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
সিরামের ওপর টিকা রপ্তানিতে ভারত সরকারের ঘোষণাটির বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানা ছিল না টিকা আমদানিতে জড়িত প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোরও।
প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও এ বিষয়ে কোনো আপডেট নেই। আমার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলে জানাতে পারব।’
গণমাধ্যম সূত্রে বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সিরামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
সিরাম ছাড়া করোনার টিকার জন্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নেই বাংলাদেশের। অক্সফোর্ডের আগেই বাজারে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফাইজার, মডার্না, চীনের সিনোভ্যাক্স ও রাশিয়ার স্পুতনিকের টিকা। কিন্তু এসব টিকার কোনোটি পেতে সরকারের তৎপরতা নেই।
এর মধ্যে চীন তাদের সিনোভ্যাক্স টিকা বাংলাদেশে ট্রায়ালের প্রস্তাব দিলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। ওই প্রস্তাবের আওতায় বাংলাদেশ এক কোটি ডোজ টিকা ফ্রি পাওয়ারও সুযোগ ছিল। কিন্তু সিরামেই আস্থা রাখে সরকার।