সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আনতে চলছে তোরজোর। কিন্তু টিকা রপ্তানিতে প্রতিষ্ঠানটির ওপর যে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটাই জানেন না সংশ্লিষ্টরা।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিরামের প্রধান নির্বাহী (সিইও) আদর পুনাওয়ালা জানান, তাদেরকে আপাতত টিকা রপ্তানিতে মানা করেছে ভারত সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে কেবল ভারত সরকারকেই টিকা দিতে পারব, সবাইকে টিকা দিতে পারব না।’
এর ফলে বাংলাদেশের করোনার টিকা প্রাপ্তিতে বড় ধরনের অনিশ্চিয়তা তৈরি হলো। সিরামের মাধ্যমে অক্সফোর্ডের টিকার ৩ কোটি ডোজ দেশে আনার কথা ছিল।
টিকা আনতে ভারতের এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। টিকার জন্য অগ্রিম ৬০০ কোটি টাকা দেয়ার কথা সোমবার।
এর মধ্যে টিকা রপ্তানিতে সিরামের ওপর নিষেধাজ্ঞা বসাল ভারত সরকার। এ ব্যাপারে কিছুই জানা নেই দেশে করোনার টিকা আমদানিতে জড়িত প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর।
প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও এ বিষয়ে কোনো আপডেট নেই। আমার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলে জানাতে পারব।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক এ বিষয়ে কথা বলবেন। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি কখন সংবাদমাধ্যমের সামনে আসছেন তা জানা যায়নি।
গণমাধ্যম সূত্রে বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহম্মদ খুরশীদ আলম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সিরামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
সিরাম ছাড়া করোনার টিকার জন্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নেই বাংলাদেশের। অক্সফোর্ডের আগেই বাজারে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফাইজার, মডার্না, চীনের সিনোভ্যাক্স ও রাশিয়ার স্পুতনিকের টিকা। কিন্তু এসব টিকার কোনোটি পেতে সরকারের তৎপরতা নেই।
এর মধ্যে চীন তাদের সিনোভ্যাক্স টিকা বাংলাদেশে ট্রায়ালের প্রস্তাব দিলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। ওই প্রস্তাবের আওতায় বাংলাদেশ এক কোটি ডোজ টিকা ফ্রি পাওয়ারও সুযোগ ছিল। কিন্তু সিরামেই আস্থা রাখে সরকার।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত করোনার টিকা নিয়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়।
ওই দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা পাবে বাংলাদেশ। এ টিকা দেশের দেড় কোটি মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে। প্রতি ডোজ টিকা সরকার কিনবে পাঁচ মার্কিন ডলার দিয়ে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশে ওই টিকার মূল সরবরাহকারী।’