মহানন্দার হিমশীতল জলে থাকতে হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাত-পা অবশ হতে বসলে কিছু সময়ের জন্য পারে উঠে শরীর গরম করে আবারও নামতে হয় জলে। এর বিনিময়ে আয় হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মহানন্দার প্রায় ২০ কিলোমিটার নদীপথে এভাবেই নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেন হাজার হাজার মানুষ। তীব্র শীতেও থামে না তাদের জীবন সংগ্রাম। থামলেই যে থেমে যাবে জীবন।
ভারত থেকে আসা মহানন্দা নদী বাংলাবান্ধা দিয়ে দেশে ঢুকে আবার তেঁতুলিয়া দিয়ে ভারতে চলে গেছে। নদীর বাংলাদেশ অংশে সারা বছর পাথর সংগ্রহ করেন তেঁতুলিয়া উপজেলার ছয় ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
তবে এসব মানুষ দুর্ভোগে পড়েন শীত মৌসুমে। অনেকে ঠান্ডায় কাজ করতে না পেরে অনাহারে দিন কাটান।
বাংলাবান্ধার ঝড়ুয়া পাড়ার আব্দুল জলিল জানান, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন দল করে নদীতে নেমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর সংগ্রহ করেন। এই পাথর মহাজনের কাছে বিক্রি করে জনপ্রতি পাওয়া যায় ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। এ দিয়েই চলে একেক জনের সংসার।
হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় শীতের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে পঞ্চগড়ে। প্রতি বছরই এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বরের শেষ থেকেই জেলায় তাপমাত্রা দুই অঙ্কের কোটায় যায়নি।
তীব্র এ শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। শুধু নুড়ি পাথর সংগ্রহকারীরা নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষই পড়েছেন দুর্ভোগে। তবে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন বেশি বিপাকে।
পঞ্চগড় শহরের অটোরিকশাচালক আলমগীর হোসেন জানান, অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই তার সংসার চলে। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো ভাড়াই মিলছে না।
ফেরিওয়ালা শরিফুল জানান, শীতের মধ্যেই সাইকেলে করে মালপত্র নিয়ে গ্রামে যেতে হচ্ছে। কিন্তু তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেচাকেনাও নেই।
এদিকে তীব্র ঠান্ডায় শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সের মানুষ। একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া, অপরদিকে নানা রোগ মানুষকে অসহায় করে ফেলছে।
পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মনোয়ারুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া ও শীতজনিত নানা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো ডিসেম্বরে তেঁতুলিয়ায় যে তাপমাত্রা ছিল, তা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। জানুয়ারিতে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, প্রতি বছর শীতে সাধারণ মানুষের জন্য সরকারিভাবে নানা কিছু করা হয়। এ বছর করোনাভাইরাস মহামারি ও শীত একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে যে শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, তা শীতার্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আনিস বলেন, হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের শীতের সুরক্ষার পাশাপাশি খাবার দেয়াও প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসা দরকার।