বরিশালে কারাগারে থাকা মাদক মামলার আসামি রেজাউল করিম রেজার মৃত্যুর ঘটনায় তার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকালে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরই মরদেহ নিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।
স্বজন ও নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহির নির্যাতনের শিকার হয়ে রেজা মারা গেছেন। এ ঘটনায় এসআই মহিউদ্দিনের বিচার দাবিতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এ সময় দুই পাশে কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেয়া তদন্তের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন এলাকাবাসী। এরপর সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা রোডে এসআই মহিউদ্দিনের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষুব্ধদের সড়ক অবরোধ। ছবি: নিউজবাংলাএদিকে পুলিশের নির্যাতনে নয়, শারীরিক অসুস্থতায় রেজা মারা গেছেন দাবি করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
রেজা বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষায় ছিলেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
তার ফুপা তারেক মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, ২৯ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে পুলিশ রেজাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। চার দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয় রেজার।
তারেক জানান, রেজার কাছে দুই জন মাদক বিক্রেতার নাম জানতে চান ডিবির এসআই মহিউদ্দিন মাহি। সেখানে স্থানীয় লোকজন ও কয়েক স্বজনও উপস্থিত ছিলেন।
‘রেজা কিছু জানেন না জানালে মহিউদ্দিন নিজের গাড়ির কাছে ফিরে যান। সেখান থেকে আবার এসে রেজার পকেটে হাত দেন। এরপর তার কাছে নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়া গেছে বলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়’, বলেন তারেক।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘৩০ তারিখ এই আসামিকে রিসিভ করি। কারাগারে আসা কাগজে রেজার অসুস্থতার কথা উল্লেখ ছিল। তবে তার পায়ের ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এ কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
মৃত রেজাউল করিম রেজা। ছবি: নিউজবাংলাহাসপাতালে রেজাউলকে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুজন। তিনি বলেন, ‘সারা শরীরে জখমের চিহ্ন ছিল। রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। বিশেষ করে দুই পায়ে স্পষ্ট জমাট রক্তের চিহ্নও দেখেছি। এগুলো নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে, নির্যাতনেই রেজাউলের মুত্যু হয়েছে।’
রেজার বাবা ইউনুস মুন্সী বলেন, ‘এসআই মহিউদ্দিন আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যায়। তখন রেজা দিব্যি সুস্থ ছিল। পরে জানতে পারি তাকে নাকি গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে।
‘এরপর রাত ৯টার দিকে পুলিশ ফোনে জানায়, বাথরুমে পড়ে গিয়ে রেজার ব্লিডিং হচ্ছে, হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওর সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দেয়নি।’
রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশি নির্যাতনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শরীরের ক্ষত স্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মৃত্যুর ঘটনা আরও খতিয়ে দেখতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হযেছে। কোতোয়ালি মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলাও হয়েছে।
মহানগর ডিবির এসআই মহিউদ্দিন মাহি নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, এই অভিযোগ মিথ্যা। তার (রেজাউল) বিরুদ্ধে আগেও মাদক মামলা ছিল।
আরও পড়ুন: