ময়মনসিংহের মাসকান্দার লিবার্টি হাসপাতালে জন্ম হলো একটি শিশুর। শিশু সন্তানকে নিয়ে মা-বাবা ফিরবেন বাড়িতে, স্বজনদের মধ্যে আনন্দ।
কিন্তু পথেই শেষ হয়ে গেল সব। জীবনের চাকা ঘুরার আগেই থেমে গেল শিশুটি। বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল তার।
সঙ্গে শিশুটির বাবা, মা, চাচা, চাচি আর ফুফু- বাঁচা হলো না কারও। সংসারে নতুন মানুষকে অভ্যর্থনার অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা পেল ছয়টি লাশ।
নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার পেচুয়ালেঞ্জী গ্রামের মানুষ তারা। সন্তানসম্ভাবা স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নববর্ষের দিন ময়মনসিংহ মাসকান্দার হাসপাতালে ভর্তি করেন মাওলানা ফারুখ আহমেদ। নতুন বছরে নতুন অতিথি পেয়ে আপ্লুত হয়েছিল পরিবারের মানুষ।
তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ১ জানুয়ারি সকালে তাকে লিবার্টি হাসপাতালে সিজার করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন রাত নয়টায় নরমালে ছেলে সন্তান হয়। আজ সকালে তাদের ছুটি দেয়। সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। মারা গেছে সবাই।’
নবজাতক নিয়ে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় ছয় স্বজন হারিয়ে বিলাপ করছেন আরেক স্বজন। ছবি: নিউজবাংলা
সন্তানের জন্ম পুরো পরিবারটিকেই ভাসায় আনন্দে। চাচা-চাচিরাও ছুটে যান হাসপাতালে। তিন দিন পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়ি ফেরার অনুমতি দিলে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে বাড়ির পথে রওয়ানা হন সবাই।
কিন্তু বাড়ি আর ফেরা হলো না জীবন নিয়ে।
দুপুর সোয়া একটার দিকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গাছতলা বাজার এলাকায় দ্রুতগামী একটি বাসের সঙ্গে গোটা পরিবারটিকে বহন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়।
সজোরে ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় ত্রিচক্রযানটি। শিশুটির বাবা ফারুক আহমেদ, মা সুমা বেগম, চাচা নিজাম উদ্দিন, ফুপু জোলেখা বেগম, চাচি জ্যোৎস্না বেগম, আর অটোরিকশার চালক রাকিবুল ইসলাম- বাঁচতে পারলেন না কেউ।
সেখানে উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, অতিরিক্ত গতি নিয়ে চলতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটান বাসের চালক।
দুর্ঘটনায় নিহত সাত জনের মরদেহের সারি। ছবি: নিউজবাংলা
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল মিয়া জানান, বাসটি তার সামনে একটি ট্রাককে ওভারটেক করার সময় অটোরিকশা সামনে চলে আসে। অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়ার পর থেমে না গিয়ে চালিয়ে যেতে থাকেন চালক। অটোরিকশাটিও তার সঙ্গে আটকে থাকে।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জালাল উদ্দিন জানান, বাসটি দ্রুতগতি নিয়ে ওভারটেক করতে গিয়েই এমনটি হয়েছে।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, নেত্রকোণা থেকে ঢাকার পথে ছিল শাহজালাল পরিবহনের একটি দ্রতগামী বাস। সেটির সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে সেটি এক অর্থে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাত জন।
সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ বাড়িতে পাঠায়। সেখানে তৈরি হয় শোকাতুর এক পরিবেশ।
ওসি খায়ের জানান, বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছেন। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।