বুড়িগঙ্গা দূষণে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হোসেন।
শুনানি শেষে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের জন্য দায়ী কেরাণীগঞ্জের একাধিক ওয়াশিং প্লান্টসহ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কারখানার বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে এ নির্দেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বুড়িগঙ্গার পানিতে বা তীরে যেন ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা করতে ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও কেরাণীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুড়িগঙ্গায় দূষণ ছড়িয়ে যাওয়া কেরাণীগঞ্জের ওয়াশিং প্লান্টগুলো হচ্ছে- আহামদ হোসেন ওয়াশিং, আমেনা ওয়াশিং, সানমুন ওয়াশিং, ইডেন ওয়াশিং, বিসমিল্লাহ ওয়াশিং, লোটাস ওয়াশিং, গ্লোবাল ওয়াশিং, রুবেল ওয়াশিং, আনুষ্কা ওয়াশিং, সততা ওয়াশিং, চঞ্জল ওয়াশিং, আব্দুর রব ওয়াশিং, ঢাকা ওয়াশিং, আজান ওয়াশিং, নিউ সাহারা ওয়াশিং, দোহার ওয়াশিং, রিলেটিভ ওয়াশিং, নিউনাশা ওয়াশিং, ইউনিক ওয়াশিং, মৌ ওয়াশিং, সেতু ওয়াশিং, কোয়ালিটি ওয়াশিং, জুয়েনা ওয়াশিং, কামাল ওয়াশিং, ওয়াটার কালার ওয়াশিং, পারজোয়ার ওয়াশিং, জিএম ওয়াশিং, কুমিল্লা ওয়াশিং, আছিয়া ওয়াশিং, ও লিলি ওয়াশিং।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার পর দুইবার কারখানাগুলো বন্ধ করা দেয়া হয়। এরপরও আগের মতই দূষণের শিকার হচ্ছে বুড়িগঙ্গার পানি। কিন্তু পরিবেশ আইন অনুযায়ী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করিম জানান, ৩০টি ওয়াশিং প্লান্ট রয়েছে সেখানে। সেগুলো মারাত্মক পানি দূষণ করছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। নয়তো দূষণ বন্ধ হবে না। এমন আরজি জানালে আদালত বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী ৩০টি ওয়াশিং প্লান্টসহ যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কারখানার বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে।
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৪ সালে একটি রিট করা হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয় হাই কোর্ট।
এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গায় সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা ছিল।
ওই সব নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে রিটকারি সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটি শুনানির জন্য আসে।