রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলে এ অঞ্চলে অশান্তির আশঙ্কা আছে উল্লেখ করে অবিলম্বে প্রত্যাবাসন শুরুর তাগিদ দিয়ে মিয়ানমারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।
চুক্তি করে এবং একাধিক তারিখ দিয়েও প্রত্যাবাসন শুরু না করা দেশটিতে গত ১ জানুয়ারি এই চিঠি দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পাঠানো হয় মিয়ানমারের স্টেট মিনিস্টার ট্রিন্ট সোয়ের কাছে।
রোববার নিজ মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নতুন বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। আমরা আশা করব, মিয়ানমার নতুন বছরে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। মিয়ানমার অতীতে কথা রেখেছে, অনেক রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিয়েছে।’
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারকে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশটি যাচাই-বাছাই শেষ করেছে কেবল ২৮ হাজারের।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিলের পর আশির দশক থেকেই নানা সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের আগস্টে হয় সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ। সব মিলিয়ে দেশে অবস্থান করছে সাড়ে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা, যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমার তার দেশের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে, চুক্তিও করেছে। প্রত্যাবাসন শুরুর একাধিক তারিখও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে সব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সে দেশের স্টেট মিনিস্টারকে আমি মনে করিয়ে দিয়েছি তাদের প্রতিশ্রুতির কথা। চুক্তি অনুযায়ী তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নিরাপত্তা দিয়ে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার কথা বলেছিল তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার যে কোনো অগ্রগতি হয়নি, তা তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি।
‘আমি তাদের স্টেট মিনিস্টারকে আরও বলেছি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দরকার আপনাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি তাদের বলেছি, নতুন বছরে আমরা আশা করি যে, আপনারা আপনাদের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটাবেন এবং কথা রাখবেন।’
একবার কিছু রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারকে আমি বোঝাতে চেয়েছি, অতীতেও আপনারা কথা রেখেছেন। নিজেদের লোকদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। এবারও নিজেদের লোক নিয়ে যান। কথা রাখুন।’
রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে। সেখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই দফায় দুই হাজারের বেশি মানুষকে কক্সবাজার থেকে সেখানে নেয়া হয়েছে।
এই স্থানান্তরের পর আন্তর্জাতিক মহলে আবার রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন এমনকি জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধিতা করার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা।
এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ভাসানচরের দিকে না তাকিয়ে মিয়ানমারের দিকে নজর দিতে জাতিসংঘকে পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে ভাসানচর নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চলছে। অনেকে বলছেন, ভাসানচর ভেসে যাবে। তবে এটা মিথ্যা তথ্য। অতীতে এই দ্বীপ কখনোই ভেসে যায়নি। আগামীতে ভেসে যাবে না বলে আমরা মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ফেরাতে জাপান আমাদের সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। চীন ও ভারতও আমাদের সঙ্গে আছে।
‘মিয়ানমারের অর্থনীতিতে জাপানের অনেক বড় বিনিয়োগ। আমরা এজন্য রোহিঙ্গা ফেরাতে তাদের প্রভাব খাটাতে জাপানকে অনুরোধ করেছিলাম। তারা এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে।’
চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি মিয়ানমারই বারবার পেচ্ছাছিল। ত্রিপক্ষীয় এ ব্যবস্থার উদ্যোক্তা রাষ্ট্র চীন। তারা এটি নিয়ে কাজ করছে।’
মিয়ানমারের ব্যবহার পরিবর্তন হচ্ছে
রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের অবস্থান পাল্টাচ্ছে বলেও মনে করেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘সমস্যার মূল যেহেতু মিয়ানমারেই রয়েছে, তাই সমস্যার সমাধানও একমাত্র মিয়ানমারই করতে পারে। তবে আশার বিষয় হলো, ধীরে ধীরে তাদের ব্যবহারের পরিবর্তন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের এই পরিবর্তনে আমরা আশাবাদী। দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। এমনকি আইনি কাঠামোর মধ্যেও কাজ করছি। যত ব্যবস্থা আছে সব নিয়ে কাজ করছি। নতুন পথও খুঁজছি।’