তাঁত ও বস্ত্র পেশাজীবীদের সংগঠন লক্ষ্মীপুর থানা তন্তুবায় সমবায় সমিতির (আবাসিক) ভবন নির্মাণ ও কার্য পরিচালনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এর সভাপতি ও পৌর মেয়র এম এ তাহেরের বিরুদ্ধে। তথ্য অনুসন্ধানে নেমেছে সমবায় অধিদপ্তর।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে লক্ষ্মীপুর হাসপাতাল রোডে তন্তুবায় সমিতির কার্যালয় পরিদর্শন করেন সমবায় অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান (যুগ্ম নিবন্ধক) আশিষ কুমার বড়ুয়া।
প্রাথমিক তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে লক্ষ্মীপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. সালমান ইকবাল বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনিয়মের কিছু সত্যতা মিলেছে।
২৪ ডিসেম্বর সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ ও ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে সভাপতি তাহেরের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন আইনজীবী রাসেল মাহমুদ মান্না ও দীপংকর চৌধুরী দিপু নামের দুই সদস্য।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সমবায় অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধানকে নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সমবায় নীতিমালা অমান্য করে পৌর মেয়র তাহের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে তিন মেয়াদে লক্ষ্মীপুর তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতির পদ দখল করেন। বিগত নির্বাচনে সমবায় আইনের বিধান অনুযায়ী সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে সত্যায়ন করার প্রয়োজন থাকলেও তিনি তাতে স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে কোনো প্রার্থীই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। পরে মেয়র তাহের নিজেও সভাপতি প্রার্থী না হয়ে কৌশলে বিগত কমিটির যোগসাজশে মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক কমিটি গঠন করেন।
সেই পরিচালক কমিটির (কো-অপ্ট) মাধ্যমে মেয়র তাহের নিজেকে সভাপতি ও তার মনোনীত প্রার্থী মো. তছলিম উদ্দিনকে সেক্রেটারি নির্বাচিত করেন।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর শহরে সমিতির উচ্চ মূল্যের স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এরই মধ্যে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালের বহু সদস্যকেই বাদ দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল রোডে সমিতির মালিকানাধীন ৩০ শতাংশ জমি ব্যবহার করে তন্তুবায়-১ টাওয়ার নামের ৬ তলা ভবন নির্মাণ করেন। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে টাওয়ারের ফ্ল্যাট ও দোকান বর্তমান সভাপতি তাহের তার আত্মীয়স্বজনের নামে বরাদ্দ নেন এবং পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মেয়র তাহের সমিতির আরও সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সমিতির সাধারণ সভার অনুমতি ছাড়াই নিজস্ব লোক দিয়ে নির্মাণ কমিটি গঠন করে সমিতির মালিকানাধীন লক্ষ্মীপুর হাসপাতাল রোডের পৌর ৭ নং ওয়ার্ডের ৪০ শতাংশ জমিতে তন্তুবায় টাওয়ার-২ নামে নির্মাণকাজ শুরু করেন।
নির্মাণাধীন ভূমির মাটি কেটে মেয়র তাহের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজের মালিকায় লক্ষ্মীপুর গরুর হাট সংলগ্ন খামার বাড়ির ভূমি ভরাট করছেন। এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষ্মীপুর থানা তন্তুবায় সমবায় সমিতি। তবে তার ভয়ে কোনো সদস্যই প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী দীপংকর চৌধুরী দিপু নিউজবাংলাকে বলেন, মেয়র তাহেরের অনিয়মের বিষয়ে ৩০ ডিসেম্বর বুধবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বরাবর আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এতে মেয়র তাহেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্য জানার জন্য শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে মেয়র তাহেরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে সমবায় অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান ও যুগ্ম নিবন্ধক আশিষ কুমার বড়ুয়া বলেন, অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে এখনও তদন্ত শুরু হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান করতেই সমিতির কার্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর তন্তুবায় সমবায় সমিতি ১৯৪৫ সালে গঠন করা হয়। এতে প্রায় তিন হাজার সদস্য ছিলেন। তবে বর্তমানে ৮১৩ জন সদস্য রয়েছেন। সমিতির ৮২ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি শেয়ার রয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের শেষ দিকে মেয়র আবু তাহেরসহ পরিবারের ১০ সদস্যের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।