নির্বাচিত জনপ্রতিধিদের বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউএনওরাই সামন্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’।
সংগঠনের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলেও ইউএনওরা সব কিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
তারা এমনকি চিঠিপত্রে উপজেলা পরিষদ ব্যবহার না করে উপজেলা প্রশাসন শব্দ ব্যবহার করছেন। চেয়ারম্যানদের বদলে নিজেরাই সব কমিটির সভাপতি হয়েছেন। আয়-ব্যয়ের সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যানদের মতামত দেয়ার জায়গা থাকছে না।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করে সংগঠনটি। এতে বলা হয়. উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়া ১৭টি বিভাগের কাজ চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘জন প্রতিনিধিহীন জনপ্রশাসন সংবিধানবহিভূর্ত ভয়ঙ্কর। জনপ্রতিনিধিদের পৃথক করে কর্মকর্তাদের সামন্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের ধারণা করছে অনেকেই।’
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, ‘কতিপয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবিধানিক নির্দেশনা এবং গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণকে পাশ কাটিয়ে জনপ্রতিনিধিবিধীন জনপ্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
হারুন পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার চেয়ারম্যান। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা শাসন করতে পারছি না। আইন ও সংবিধান অনুযায়ী। আমাদের কাজে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে। সব কাজ করছেন ইউএনওরা। অথচ জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। জনগণ আমাদের কাছে জবাবদিহিতা চায়।’
এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় কথা বলেছি। প্লিজ হেল্প আস।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘উপজেলাধীন প্রায় শতভাগ কমিটির কার্যাবলী নিষ্পত্তির জন্য গঠিত প্রায় শতভাগ কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। অথচ উপজেলা আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী উপদেষ্টা হবেন একমাত্র স্থানীয় সংসদ সদস্য।
‘১৭টি বিভাগের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সমস্ত কাজই কমিটি প্রধানের ক্ষমতা বলে ইউএনও নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। অনুসরণ করছেন না মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনাসমূহ।’
চেয়ারম্যান হারুন বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিরাজমান করোনা পরিস্থিতিতে কর্তৃত্ববিহীন হলেও জনগণের পাশে থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে সেবা প্রদান করেছি। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে না পারায় ভোটারদের কাছে আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দিনের পর দিন বিতর্কিত হচ্ছি।’
কর্মকর্তাদের আইন পরিপন্থী আচরণ ও কাজের কারণে মাঠপর্যায়ে সমন্বয়হীনতা চলছে বলেও অভিযোগ করেন জনপ্রতিনিধিরা।
পাঁচ দাবি
সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওদের এইসব কার্যক্রমের প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে আছে উপজেলা পরিষদ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে জারি করা পরিপত্র সংশোধন, উপজেলায় ১৭টি বিভাগের জন্য ভাইস চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ১৭টি কমিটি কার্যকর করা, উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে কাজ করা, রাজস্ব জমা ও ব্যয়ের বিষয়টি চেয়ারম্যানের অনুমোদন ক্রমে সম্পাদনে যৌথ আয়ন-ব্যয়ন আদেশ প্রদান এবং চিঠিপত্রে উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার না করে উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করা।
দাবি না মানলে ১৭ জানুয়ারি থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, আইন সম্পাদক রীনা পারভীনসহ বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।