বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পৌর নির্বাচন: ভোট নিয়ে সমালোচনা মুছতে চায় আ. লীগ

  •    
  • ২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৫:৩১

প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার চলছে ৬১ পৌরসভায়। আওয়ামী লীগ চায় আরও বেশি ভোটার আসুক কেন্দ্রে। এ জন্য ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছে বিতর্ক এড়ানোর। বিরোধী পক্ষ যেন প্রচারে বাধা না পায় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের যত সমালোচনা, তার একটি হলো ভোটার খরা। সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অস্বাভাবিক কম হারে ভোট পড়া নিয়ে আওয়ামী লীগকে বারবার ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে।

এর মধ্যে এবারের পৌরসভা নির্বাচন পুরোপুরি ব্যতিক্রম। প্রথম ধাপে প্রায় সব পৌরসভায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, দুই একটি পৌরসভা ছাড়া ভোট নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না ওঠার পাশাপাশি সিংহভাগ এলাকায় নৌকার জয়ে স্বস্তি আওয়ামী লীগে।

এই পরিস্থিতি দেখে উৎসাহী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারির ভোটকে ঘিরে ৬১ পৌরসভায় চলছে প্রচার।

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রচার বা ভোট নিয়ে যেন কোনো বিতর্ক না হয়, সে জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিরোধী পক্ষ যেন প্রচারে কোনো রকম বাধা না পায় সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দল মনে করছে, ভোটার কেন্দ্রে এলে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ কম হবে। আর নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা এড়াতে পারলে সরকারের জন্য সামনের সময় আরও স্বস্তির হবে।

এ জন্যই পরের ধাপের নির্বাচনে যেন আরও বেশি ভোটার আসে, সে জন্য তৎপর তারা।

প্রধম ধাপে ভোট হয়েছে ২৪টি পৌরসভায়। একটিতে এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট গ্রহণ হলেও ঘোষণা হয়নি ফলাফল।

বাকি ২৩টির মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে, ৪০ শতাংশ, আর সবচেয়ে বেশি পড়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ৮৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে ভোটের হার ৬৫ শতাংশ।

উত্তরের জেলা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী আর উত্তর পূর্বের হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ভোটার উপস্থিতি এত বেশি ছিল যে নির্ধারিত সময় চারটার পরেও ভোট নিতে হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জে কয়েকটি কেন্দ্রে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ছিল ভোটারের উপস্থিতি।

পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নির্ধারিত সময় চারটার পরেও ভোটারের এই লাইন দেখা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা

২৩ পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতেছে ১৮টিতে। এর মধ্যে ২৫ বছর টানা হারের পর জিতেছে তারা পঞ্চগড় সদরে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে ভোট পেয়েছে চার গুণ।

বিএনপির প্রার্থীরা তিনটি পৌরসভায় ভোট বর্জন করেছেন কারচুপির অভিযোগ এনে আর একটিতে ফলাফল বর্জন করেছেন। বাকি পৌরসভায় পরাজিত প্রার্থীদের তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি গণমাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এতদিন কেন্দ্রে ভোটার না আসার যুক্তি হিসেবে করোনার অজুহাত দিয়েছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব সময়ই ভোটারদের উৎসাহ বেশি থাকে। কিন্তু গত এক বছরে করোনার কারণে মানুষ সংক্রমণের ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেত না।’

তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ করোনার সঙ্গে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে আর এ কারণেই আমরা এখন ভোটারদের বিপুল উৎসাহ দেখতে পারছি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ও আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভোটারের সংখ্যা তখনই বাড়ে যখন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়। যখন মানুষ দেখে তারা যাকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে, তখনই তারা ভোটকেন্দ্রে যায়।

‘ভোটার এসেছে মানে হলো তারা ভোট দিতে পেরেছেন এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পেরেছেন’, বলেন আওয়ামী লীগের এ কেন্দ্রীয় নেতা।

মানিকগঞ্জের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন। ছবি: নিউজবাংলা

এর আগের নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি রসিকতাও হয়েছে বহু। আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে নানা ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে কেন ভোটার আসে না।

গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়ে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

১৮ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনে ভোট পড়ে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

১৩ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনে ভোট পড়ে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

সরকারি দলের পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতির নিম্নহার নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। আর এবার পৌরসভা নির্বাচনের আগে ৪২ জন নাগরিকের এক যৌথ বিবৃতিতে কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টিও উঠে আসে।

নাগরিকরা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতেও রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেয়। বঙ্গভবন থেকে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ অবশ্য আসেনি। তবে ২৮ ডিসেম্বরের ভোটের চিত্র দেখে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এসেছে ফুরফুরে প্রতিক্রিয়া।

ভোট শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে ভোট খুবই ভালো হয়েছে। সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হয়েছে। সে হিসেবে বলাই যায় সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘মানুষ কিন্তু ভোট দিতে চায়। মানুষ যাকে ভোট দিচ্ছে সে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসায় নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আস্থা বেড়েছে। এটা যত হবে গণতন্ত্র ততই সুরক্ষিত হবে, সুসংগঠিত হবে। একদিন হয়ত দেখা যাবে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত গণতন্ত্রের দেশগুলোর মতোই সুসংগঠিত হয়ে গড়ে উঠবে।’

এ বিভাগের আরো খবর