বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঘুরে আসুন ছয়শ বছরের ধানুকা মনসাবাড়ি

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:২৪

শরীয়তপুর জেলার ধানুকা গ্রামে মনসাবাড়ি বা ময়ূর ভট্টের বাড়িটি প্রায় ছয়শ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। সে সময় এই অঞ্চলের মধ্যে এই বাড়িতেই মনসা পূজার আয়োজন হতো। পূজায় অংশ নিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে হিন্দু ধর্মের লোকদের আগমন ঘটত বলে বাড়িটি মনসাবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

প্রায় ছয়শ বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শরীয়তপুরের ধানুকা মনসাবাড়ি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের পথে।

সুলতানী ও মোঘল আমলের নির্মাণ শৈলীতে নির্মিত এ বাড়িতে রয়েছে পাঁচটি ইমারত। এগুলো হচ্ছে দূর্গা মন্দির, মনসা মন্দির, সংস্কৃত টোল বা পাঠাগার, নহবতখানা ও আবাসিক ভবন।

অনেকে বাড়িটিকে ‘ময়ূর ভট্ট’-এর বাড়ি নামেও ডেকে থাকেন।

ঐতিহাসিক নথিপত্র থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার ধানুকা গ্রামে মনসাবাড়ি বা ময়ূর ভট্টের বাড়িটি প্রায় ছয়শ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে।

তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলের মধ্যে এই বাড়িতেই মনসা পূজার আয়োজন হতো। পূজায় অংশ নিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে হিন্দু ধর্মের লোকদের আগমন ঘটত বলে বাড়িটি মনসাবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

কথিত আছে, ভারতের কৌনজ থেকে তৎকালীন ধনাঢ্য ভট্টাচার্য পরিবার ধানুকা অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। তারা শিক্ষা ও অর্থবিত্তে সমৃদ্ধ ছিল। আর তাদেরই পূর্বপুরুষ ছিলেন ময়ূর ভট্ট।

কাঠের বাধাই করা ও তুলট কাগজে লিখিত ৩৫টি ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি (পুঁথি) এ বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও জেলার ইতিহাস গবেষক জালাল উদ্দিন আহম্মেদ। যার কয়েকটি কপি নেপালে ও বাংলাদেশ জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য পাঠানো হয়েছিল। আর বাকি কপিগুলি তার নিজের সংরক্ষণে এখনও রয়েছে।

জালাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, পাণ্ডুলিপিগুলো দুর্লভ। এগুলো ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী। এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তিনি। মনসাবাড়িতে একটি ছোট জাদুঘর তৈরি হলে বইগুলো সেখানে রেখে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতেন বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, মনসাবাড়ি ও এর আশেপাশে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চুরি ও নষ্ট হয়ে গেছে।

১৯৭৯ সালে শরীয়তপুরের প্রথম মহকুমা প্রশাসক আমিনুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে সংস্কারকাজ শুরু হলেও তা দক্ষ জনবলের অভাবসহ নানা কারণে সে যাত্রা সংস্কারকাজ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন ও সংস্কারকাজ পরিচালনা করে এ বাড়ির ইতিহাস রহস্য উন্মোচন করতেন তাহলে আর কালের আবর্তে হারিয়ে যেত না এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শনটি।

দর্শনীয় এই বাড়িটির পাশে থাকেন শ্যামাপ্রদ চক্রবর্তী। তিনি অনেকদিন ধরে বাড়িটির দেখভাল করছেন। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘দিন দিন এ বাড়িটির জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এখনও প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী বাড়িটি দেখতে আসেন। কিন্তু কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা না থাকায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

‘আমার অনেক বয়স হয়েছে। এখন যেকোনো সময় ওপারে চলে যাব, কিন্তু সরকার বাড়িটির দায়িত্ব নিচ্ছেন না। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বারবার ঘুরে ফিরে দেখে গেলেও কোনো কাজ হয়নি। আমার শেষ মুহূর্তের দাবি বাড়িটিকে সরকারের অধীনে নিয়ে শরীয়তপুরের একটি দর্শনীয় স্থান ঘোষণা করার।’

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমা উল হুসনা লিজা বলেন, ‘ধানুকা মনসাবাড়ি ইতিহাসের কথা বলে। গবেষণার ক্ষেত্রেও এসব নির্দশন গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় জেলা প্রশাসন বাড়িটিকে সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু তার কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসায় ওই চিঠি সম্পর্কে জানতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে আবারও নতুন করে চিঠি পাঠানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর