বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিমানবন্দরের বোমা ‘নিরীহ’

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:১৮

আমার ধারণা বোমাগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। বিশ্বের অনেক স্থানে এমন পুরানো বোমা পাওয়া গেছে, কিন্তু কোনোটা নিজে থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এমনটা শুনিনি: অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী।

তিন সপ্তাহের ব্যবধানে মিলল পাঁচটি বিশাল বোমা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‍তৃতীয় টার্মিনালের কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা। সেখানে পাইলিংয়ের মধ্যে খনন করতে গিয়ে যদি ফেটে যায় কোনোটি!

কর্মীদের এই উদ্বেগ আমলে নিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও। তারা পুরো এলাকাটি স্ক্রিনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই কাজটি করছে বিমানবাহিনী। যেখানে পাইলিং চলবে, তার আগে এলাকাটি নিরাপদ কি না, সেটি নিশ্চিত করছে তারা।আরও পড়ুন: শাহজালালে ফের ২৫০ কেজির বোমা

যদিও বিমান বাহিনীর সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই বোমাগুলো মাটির নিচে থাকলে ফাটার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ, এই বোমাগুলোর যে বৈশিষ্ট্য তাতে, বড় ধরনের আঘাত না লাগলে তা বিস্ফোরিত হয় না। আর মাটির নিচে প্রায় পাঁচ দশক পড়ে থাকার পর বিস্ফোরণের ক্ষমতাও সেগুলো হারিয়ে ফেলতে পারে।আরও পড়ুন: শাহজালালে ‘আরও বোমা থাকতে পারে’

ফলে মাটির নিচে বোমা রেখেই নির্মাণ কাজ করা হলে ভবিষ্যতেও ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন না বোমা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে কাজ করা ওই বিশেষজ্ঞ।

প্রথম বোমাটি উদ্ধারের পর বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বোমাটি মুক্তিযুদ্ধকালীন।

যুদ্ধের সময় গঠন করা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সামছুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, তার ধারণা দেখানে আরও অনেক বোমা থাকতে পারে।

কারণ, সে সময় কুর্মিটোলায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল। আর ৪ ও ৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানি আস্তানার ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালায়। সেই হামলায় রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে ফেলা হয় বেশ কিছু বোমা।

এই বোমাগুলো জেনারেল পারপাস বোমা, যেগুলো ফাটে শক্ত কিছুতে জোরে আঘাত লাগলে। জলাভূমি বা কাদা মাটি থাকলে বোমাগুলো সাধারণত বিস্ফোরিত হয় না। আর এখন যেখানে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলছে, তখন ওই এলাকায় ছিল জলাভূমি।

সাবেক বিমান সেনার এই ধারণা সত্য প্রমাণ করেই উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক বোমা।

প্রথম বোমাটি পাওয়া যায় ৯ ডিসেম্বর। পাঁচদিন পর ১৪ ডিসেম্বর পাওয়া যায় আরও একটি বোমা। তারও নয় দিন পর ২৮ ডিসেম্বর পাওয়া যায় চতুর্থ বোমাটি। দুই দিনের ব্যবধানে ৩০ ডিসেম্বর আসে পঞ্চম বোমা উদ্ধারের খবর।

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমরা খুব সতর্ক। ভাগ্যিস আমরা কাজ করতে গিয়ে বোমাগুলে পেয়েছিলাম। নইলে তো জানাই যেত না এগুলোর সম্পর্কে।

‘পুরো এলাকাই স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কাজটি করছে বিমান বাহিনীর সদস্যরা। তারা কোনো একটি স্থান নিরাপদ বললেই তবে আমরা সেখানে কাজ করছি।’

খনন কাজ করার সময় শ্রমিকরা বোমার বিষয়ে জানালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায় বিমানবাহিনীকে। তাদের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে বোমাগুলো নিরাপদ স্থানে নিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়।

শাহজালালের মাটির নিচে থাকা বোমা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী্। বলেন, ‘আমার ধারণা বোমাগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। বিশ্বের অনেক স্থানে এমন পুরানো বোমা পাওয়া গেছে, কিন্তু কোনোটা নিজে থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এমনটা শুনিনি।’

তিনি বলেন, ‘শাহজালালের বোমাগুলো যখন ফেলা হয়েছে এমনিতেই সেগুলো খুব পুরনো ছিল।সে কারণে তখন অনেক বোমাই অকার্যকর ছিল। তার উপর পড়েছে কাদা পানির উপর। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বোমাগুলো এতদিনে নিশ্চয়ই ড্যামেজ হয়েছে।’

যদি কোনো বোমা সতেজ থাকে তাহলে কী হবে?

এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, থাকতেই পারে। তবে জোরে আঘাত না লাগলে ফাটবে না, এটাই এ ধরনের বোমার কার্যপ্রণালী। এ ধরনের বোমা ভারী স্টীলের আবরণ দিয়ে মোড়ানো থাকে। যা ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পানি বা বাতাস ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করে। আর বোমার ভেতরে একটা ফিউজ থাকে, যেখানে আঘাত লাগলে বোমাটি ফেটে যায়।’

তবে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। ইশফাক ইলাহী চৌধুরী্ বলেন, ‘এই ধরনের বোমার মেয়াদকাল থাকে একশ বছরের কাছাকাছি। কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে এখন যদি পাইলিং করতে গিয়ে জোরে আঘাত লাগে তাহলে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’

বিস্ফোরণ হলে কতটা ক্ষতি হতে পারে, আর নিচে বোমা রেখেই বিমানবন্দর নির্মাণ হলে কী হতো?

সাবেক বিমান সেনা বলেন, ‘জিপি বোমাগুলো সাধারণত এয়ার ফিল্ড, রানাওয়ে বা স্থাপনার বড় ক্ষতি করতেই ফেলা হতো। এখন ফাটলে কতটা ক্ষতি হবে তা বলা কঠিন, তবে আগে রানওয়েতে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর ক্ষত তৈরি করতে এতটি জিপি বোমাই যথেষ্ট ছিল।

‘আর আগেই বলেছি, আঘাত না লাগলে ফাটবে না। তাই ধরা না পড়লে এভাবেই বিমানবন্দরের মাটির নিচে থেকে যেত। আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।’

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ উল আহসানও মনে করেন আতঙ্কের কিছু নেই।

তিনি বলেন, ‘এত বছর কাদা-মাটির নিচে থেকে বোমাগুলো এরই মধ্যে অকার্যকর হয়ে ‍গেছে। বোমাগুলোর সবই জং ধরা, এগুলো মাটির নিচে পড়ে থাকলেও সমস্যা হবে না। তবু নিরাপত্তার কথা তো মাথা থেকে ফেলে দেয়া যায় না। তাই স্ক্রিনিংয়ের পরই কাজ চলছে। সবগুলো বোমা মাটি থেকে বের করে ফেলতে চাই আমরা।’

কীভাবে চলছে স্ক্রিনিং?

তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘স্ক্রিনিং মেশিনগুলো সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার গভীর পর্যন্ত ডিটেক্ট করতে পারে। বিমান বাহিনীর অভিজ্ঞ দল এ নিয়ে কাজ করছে। সামনে আরও বোমা পাওয়া গেলে সেগুলোও উদ্ধার করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর