অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন বিনা দোষে সাজা খাটা বেনারসি কারিগর মো. আরমান।
বৃহস্পতিবার আরমানের আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দীন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রায়ে তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত চার পুলিশ সদস্যকে তাদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে সরিয়ে ‘কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়’ বদলি এবং ঘটনা তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। আরমানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবির পল্লব।
২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে আটক হন আরমান। কিন্তু তাকে মাদক কারবারি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি শাহাবুদ্দীন বিহারি হিসেবে দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
২০০৫ সালে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক হন মিরপুর বিহারি ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি ও তার দুই সহযোগী। সেই মাদক মামলায় ২০০৭ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্ত হন শাহাবুদ্দিন।
২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে আবার জামিন আবেদন করেন তিনি। এতেও জামিন মেলে তার। এরপর ফেরারি হয়ে যান শাহাবুদ্দিন।
২০১২ সালের ১ অক্টোবর মামলায় শাহাবুদ্দিন ও তার দুই সহযোগীর ১০ বছর জেল ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়। রায় অনুযায়ী পলাতক শাহাবুদ্দিনকে ধরতে জারি হয় পরোয়ানা।
এর ৪ বছর পর সেই পরোয়ানায় পল্লবী থানার এসআই রাসেল গ্রেপ্তার করেন বিহারি ক্যাম্পের বেনারসি কারিগর আরমানকে। এরপর গেল ৪ বছর অন্য আসামির সাজা খাটছেন তিনি।
ঘটনাটি নিয়ে ২০১৯ সালে সংবাদ প্রচার করে কয়েকটি মাধ্যম।
নিউজবাংলার এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলা তদন্তের সময় এজাহারে মূল আসামি শাহাবুদ্দীন বিহারির নামের পাশে ওরফে আরমান লেখা হয়। আর শাহাবুদ্দীনের বাবার নাম মহিউদ্দীন হলেও তার জায়গায় আরমানের বাবার নাম প্রয়াত ইয়াসিন জুড়ে দেয়া হয়।
এতে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ডিবির এসআই সিরাজুল ইসলাম ও নূরে আলম সিদ্দীকী এবং পল্লবী থানার এসআই মো. রাসেল। আরমানকে আটকের সময় পল্লবী থানার ওসি ছিলেন দাদন ফকির।
এই চার পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিকভাবে দোষী বলছে হাইকোর্ট। তদন্তে তাদের দোষ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে রায়ে।
আলোচিত এই ঘটনায় ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আরমানকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবির পল্লব।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জাহালমের মতো আরমানও মুক্তি পেতে যাচ্ছে, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। আমাদের চেষ্ট সফল হলো।
‘এই রায়ে আবারও প্রমাণ হলো অন্যায় কখনও চাপা থাকে না। আশা করব, দ্রুত আরমান জেল থেকে ছাড়া পাবে। আর ক্ষতিপূরণের সহায়তায় নতুনভাবে জীবন শুরু হবে আরমানের।’
ব্যারিস্টার পল্লব বলেন, ‘রায় পড়ার সময় বিচারক সাংবাদিকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিচারক বলেছেন, সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচার না করলে এমন একটি অমানবিক ঘটনা হয়তো সামনেই আসতো না।
‘সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এভাবে সমাজের অন্যায়-অপরাধ দূর করতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিচারক।’
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আরমানের মা বানু খাতুন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আপনাদের জন্য আমার ছেলে বিচার পাইছে বাবা। এখন আমার বুকের মানিক বুকে ফিরুক। আর কিছু চাই না।’