বেশ কয়েক বছরের চিঠি চালাচালি, আলাপ আলোচনার পর অবশেষে রাজধানীর লাখ ব্যবস্থাপনা ও পানি নিষ্কাষণের দায়িত্ব পেল দুই সিটি করপোরেশন।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতার কারণে জলাবদ্ধতা নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন বারবার সমালোচনার মুখে পড়ছিল। যদিও এর দায়িত্ব কাগগজ কলমে ছিল ওয়াসার হাতে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, দুই সিটির মেয়র ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপস্থিতিতে এক সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এর মধ্য দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নিল দুই সিটি করপোরেশন। ওয়াসার তত্ত্বাবধানে থাকা খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও এসে পড়ল সিটি করপোরেশনের কাঁধে।
এই পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদী সিটি করপোরেশন।
উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বলা হতো খাল তুমি কার? এখন এই চুক্তি স্বাক্ষরের ভেতর দিয়ে ঢাকার খালগুলো ঠিকানা পেল।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এই পরির্তনের ভেতর দিয়ে ঢাকা মহানগর জলবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে গেল।’
বৃষ্টির মৌসুমে সড়কে পানি জমে দুর্ভোগ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এ নিয়ে ঢাকার দুই মেয়র নানা সময় নাগরিকদের সমালোচনার শিকার হয়েছেন।
যদিও রাজধানীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ‘বিকলাঙ্গ’ আখ্যা দিয়ে করে তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনও ওয়াসার প্রস্তাবে রাজি হননি।
অবশেষে গত ২৬ নভেম্বর সচিবালয়ে ‘ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালসমূহ সিটি করপোরেশনের নিকট ন্যস্তকরণ’ সংক্রান্ত এক পরামর্শ সভায় ঢাকার পানি সরানোর দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।
এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় করা যায় সেজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিমকে আহ্বায়ক করে একটি কারিগরি কমিটিও করা হয়। ওই কমিটিতে দুই সিটি করপোরেশনের চারজন করে আটজন এবং ওয়াসার চারজন প্রতিনিধি ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সময় নিয়েছি। পর্যালোচনা করেছি। এর পর নানা প্রক্রিয়া শেষে এই দায়িত্ব ওয়াসাকে হস্তান্তরের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর ওয়াসার কাছে যে ম্যানপাওয়ার, টেকনোলজিসহ যা আছে তা দুই মেয়রের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই মেয়রকে ঢাকা শহরের খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়গুলো উদ্ধারের তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘খাল দখল করে রাস্তা বানানো হয়েছে। তখন এটা চিন্তা করা হয়নি যে রাস্তা না বানিয়ে এখানেই ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস চালু করা যায়। সেটা হলে তো আর দখল করা দরকার হতো না। সেই ভুল কাজটা সবাই করেছে। এখন যতটুকু সম্ভব ধাপে ধাপে আমাদের এগুলোকে পুনরুদ্ধারের কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকার দুই মেয়র মহানগরের খালগুলো দখল ও বর্জ্যমুক্ত করে একটির সঙ্গে আরেকটির সংযোগ স্থাপনের ওপর জোর দেন।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এই পরিকল্পনা করা গেলে ঢাকার সৌন্দর্য ভেনিসের চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এর মধ্যে নিজেদের অর্থায়নে জিরানী খাল, শ্যামপুর খাল ও মান্ডা খাল থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। এই তিনটি খালের মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের মতো। আগামী শনিবার (২ জানুয়ারি) থেকে ওই তিনটি খালসহ দুটি বক্স কালভার্ট থেকে আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু হবে।’
জুনের মধ্যে আদি বুড়িগঙ্গা, ধোলাইখাল ও জিরানি খাল থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা করে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘খালগুলো দখল ও বর্জ্যমুক্ত করার পর এর সৌর্দয্য বর্ধনসহ পুনঃদখল রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ৯০০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। শিগগির তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে।’
উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, খালের সীমানা চিহ্নিত করে খাল তীরে তৈরি করা অবকাঠামো উচ্ছেদ করা কবে। সেই সঙ্গে খালের তীরে নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেন।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, ‘এই দায়িত্ব অনেক আগেই সিটি করপোরেশনের হাতে যাওয়া উচিত ছিল।… এই সিদ্ধান্ত ঢাকা শহর থেকে বৃষ্টির পানি, প্লাবনের পানি বেরিয়ে যাওয়ার গতিকে আর বেগবান করবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বকারী স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করব, আগামী বছর ঢাকায় কোনো জলবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না।’