বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সড়কে বেশি মরছে বাইকাররা

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:৩৭

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন হাজার ২০২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা এক হাজার ১১০ টি। প্রাণহানি এক হাজার ১৫১ জনের। এই সংখ্যাটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকা পথচারী ও তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকা বাস যাত্রীর দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

রাজধানীর অদূরে কাঞ্চন ব্রিজ এলাকা। এই পথ গেছে নরসিংদীর দিকে। আর যানজটমুক্ত সড়ক বলে ইদানীং গাড়িগুলো বেশ ভালোই ব্যবহার করছে সড়কটি।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেল শত শত গাড়ি ছুটছে তীব্র গতিতে। সাঁই করে ছুটছে মোটরসাইকেলও। বাধ্যতামূলক হলেও অনেকের মাথাতেই নেই হেলমেট। এক বাইকে তিন জনকেও দেখা গেল।

রাজধানীর সঙ্গে পদ্মা সেতুর যোগাযোগের জন্য ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কটি উন্নত করা হয়েছে। চওড়া মহাসড়কের মানও বেড়েছে ব্যাপক। ওই সড়কে এখন মানুষ যায় ঘুরতে, তাদের একটি বড় অংশ চলে বাইকে। সেতু নির্মাণ দেখার পাশাপাশি মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেতে যাওয়া বাইকগুলোর গতি কখনও কখনও উচ্চ গতির প্রাইভেট কারকেও ছাড়িয়ে যায়।

তীব্র গতিতে ছোটার যে বাসনা, তাতে যে ঝুঁকি, তা যে বিবেচনায় থাকে না, সেটি স্পষ্ট।

কাঞ্চন ব্রিজ এলাকায় মোটরবাইক চালক পলাশ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বাইক চালিয়ে এসে ডাবের পানি পান করছিলেন।

পলাশ বলেন, ‘এ বছর প্রচুর বাইক দুর্ঘটনা ঘটে অনেক মানুষ মারা গেছে। নতুন চালানো শিখে, শিখেই একটা বাইক নিয়ে রাস্তায় উঠে যায়। চালায় ওভার স্পিডে। হাইওয়েতে চলতে হলে লুকিং গ্লাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটা করে না বলেই মনে হয়। কিছু দিক নির্দেশনা মেনে চললে বাইক দুর্ঘটনা কমে আসবে।’

মহাসড়কে বড় সমস্যা হলো সব গাড়ির উচ্চ গতি। সেখানে বাইক থেকে পড়ে গেলে পেছন থেকে আসা গাড়িতে পিষ্ট হয়েই মৃত্যু হয় বেশিরভাগের।

চলতি বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছেন, তাদের মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি হলেন বাইক আরোহী।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে তিন হাজার ২০২ টি। নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৯৮৭ জন।

এর মধ্যে বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা এক হাজার ১১০ টি। প্রাণহানি এক হাজার ১৫১ জনের।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারা গেছে পথচারী। আর বাস যাত্রীর সংখ্যা নিহত বাইক আরোহীদের অর্ধেকেরও কম।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতিতে দুই মাসের মতো গাড়িই চলেনি রাস্তায়। তার পরেও মোটরবাইক দুর্ঘটনা থেমে ছিল না। অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে মোটরসাইকেল তুলে দেয়া দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।’

মহাসড়কে ঘুরে দেখা যায়, বাইকাররা হেলমেটের ব্যাপারে উদাসীন। তাড়াহুড়ো করতে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর প্রবণতা আছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক বাইকার আর মাত্রাতিরিক্ত গতির সমস্যা প্রকট।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, যিনি নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন।

তিনি বলেন, ‘বাইক দুর্ঘটনা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ২০১৬ সাল থেকে। আমরা যে রিপোর্ট করি সেখানে বলে আসছি যে, মোটরসাইকেলকে যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায় তাহলে এটা আমাদের জন্য ভয়াবহতা ডেকে নিয়ে আসবে।’

২০১৬ সালে বিআরটি-এর তথ্য অনুযায়ী দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল সাত লাখ। সেটা বর্তমানে ৩০ লাখের উপরে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলছেন, ‘এই মোটরসাইকেল যারা চালাচ্ছে তারা অন্যান্য যানবাহনের চালকদের মত কোনো ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে না। কোনো রকমে একটা লাইসেন্স জোগাড় করে বা না করে তা চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সড়কে যাত্রী, চালক, সাধারণ পথচারী যদি সড়কের নিয়ম না জানে-না মানে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটাবেই। মোটরবাইক চালানোর জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন অনেকেরই সেটা নেই।

‘তারা ভাবে, যেহেতু সাইকেল চালাতে পারে, মোটরসাইকেল তার জন্য কোনো ব্যাপারই না। বেশিরভাগ চালক কিছুই মানতে চায় না। তারা একটু ফাঁক পেলেই সেখান দিয়ে চলে যেতে চায়।’

কাঞ্চন ৩০০ ফুট রাস্তায় স্থানীয় গাড়ির মেকার নিপেন্দ্র দাস তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ড্রাইভারদের একটু গাফিলতি আছে। বাইক যারা চালায় এদেরও গাফিলতি আছে। উভয়েই যদি সংযত হয়ে চলে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটে না।’

তিনি বলেন, ‘বাইকাররা চায় আগে যেতে, অন্য গাড়ির ড্রাইভাররাও খেয়াল করে না। এর কারণে দুর্ঘটনা হয়। এই রাস্তায় আমি অনেক দেখেছি, বাইক দুর্ঘটনা হইলেই মৃত্যু হয়।’

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে বাইকাররা রাস্তায় চলার সময় লেন মেনে চলে না। তাদের মতো করে যখন যে দিকে ফাঁক পায় সে দিক দিয়েই চলাচল করে। অনেকেই আবার হেলমেট ব্যবহার করেন না।’

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই রাস্তায় লেন মেনে চলতে হবে। ওভার স্পিডে চালানো যাবে না। হাইওয়েতে সকল গাড়িই স্পিডে চলে। তাই সবসময় সতর্ক থেকে সকল নিয়ম মেনে ড্রাইভ করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর