করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় জমির দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী দুই বছর জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আগে ঠিক করা সর্বনিম্ন বাজারমূল্য বহাল রাখা হবে।
বুধবার এই নির্দেশনা দিয়ে নিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তাই জরুরি প্রয়োজনেও নাগরিকরা জায়গা-জমি বিক্রি করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
‘২০১৭ ও ২০১৮ সালে ঠিক করা সর্বনিম্ন বাজারমূল্য ২০২১ ও ২০২২ সাল পর্যন্ত জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বহাল থাকবে।’
জমির মূল্য নির্ধারণ আইনের সূচনা হয় ২০০২ সালের ১ জুলাই। তখন নির্ধারিত মূল্যে জমি নিবন্ধন শুরু হলেও এ আইনের দুর্বলতার কারণে বাস্তবে না বাড়লেও কাগজে-কলমে মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। জমির দামের এ ভৌতিক বৃদ্ধির ফলে ক্রেতাদের কাছে তা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দেয়। তখন বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।
দেশে জমির দাম দুই বছর বাড়াবে না সরকার। ঢাকার ফাইল ছবি
একাধিক সাব-রেজিস্ট্রার জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কিংবা কালো টাকা সাদা করার জন্য জমির মূল্য কয়েক গুণ দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে জমির দলিল নিবন্ধন শুরু হয়। অনেক স্থানে অধিগ্রহণকৃত জমির অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য নিবন্ধনকৃত দলিলে জমির বেশি মূল্য দেখানো হয়। ফলে এসব স্থানে জমির গড় মূল্যও হয়ে দাঁড়ায় আকাশচুম্বী।
- আরও পড়ুন: ৫০ ভাগ বেড়ে যাচ্ছে জমির মূল্য
এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে নিবন্ধন খরচ বেশি হয়ে যায়। ফলে সাফ-কবলা দলিল নিবন্ধন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো অনুধাবন করে ২০১৭ সালে একটি পরিপত্র জারি করে জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, একটি উচ্চতর বিশেষ কমিটি গঠন করে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যার ওপর ভিত্তি করে নতুন করে বাস্তবসম্মত জমির মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, ‘বাজারমূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি একটি ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি প্রক্রিয়া। অধিকাংশ মৌজায় সম্পত্তির সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্য বিগত কয়েক বছরে প্রকৃত মূল্যের তুলনায় বেড়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বাজারমূল্য প্রকৃত বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম।’
পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘বাজার, রাস্তা-ঘাট বা স্কুল-কলেজ বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকলে তার আশপাশের ভূমির মূল্য একই মৌজার সমশ্রেণিভুক্ত অন্য জমির তুলনায় বেশি হয়। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি শ্রেণির অবস্থান নির্বিশেষে সমস্ত জমির মূল্য একই হারে নির্ধারিত হয়, যা বাস্তবভিত্তিক নয়।’
সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমির অবস্থানগত প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে মৌজাগুলোকে গুচ্ছ বা ক্লাস্টারে বিভক্ত করে জমির বাস্তবভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করা একান্ত আবশ্যক বলেও পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ কমিটিকে নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেবা গ্রহণকারী নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার নির্দেশও দেয়া হয়েছ। আগামী ছয় মাসের মধ্যে গুচ্ছভিত্তিক সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ করে নিবন্ধন অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে পরিপত্রে।