রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে জানিয়ে জাতিসংঘকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত নাগরিকদের জোর করে ভাসানচর পাঠানো হচ্ছে না; ভবিষ্যতেও হবে না। তাই জাতিসংঘকে ভাসানচর নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মিয়ানমারে একটি বিশেষ দল পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এর আগে থেকে ছিল আরও প্রায় চার লাখ। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে ৩৪টি ক্যাম্পে।
কক্সবাজার ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশ, ভূমিধসের শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে সেখানে চাপ কমাতে উদ্যোগ নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচরে নেয়া হয় রোহিঙ্গাদের। ফাইল ছবি
বেশ কিছু এনজিও ও বিদেশি সংস্থার কারণে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে রাজি করানো যাচ্ছিল না। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে এক দল রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধা দেখিয়ে আনার পর একটি অংশ সেখানে যেতে রাজি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০ বছর আগে জেগে ওঠা দ্বীপটিতে সভ্য উপায়ে বসবাসের সব সুযোগ সুবিধাই তৈরি করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জল, বিকল্প আর্থিক আয়ের ক্ষেত্র তৈরি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সেখানে স্বেচ্ছায়ই সবাই যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বল প্রয়োগের কোনো সুযোগই নেই।
ভাসানচরে বসবাসকারীদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত স্থানের অভাব নেই জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের সুযোগও রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন ভসানচর ও নোয়াখালীর মধ্যে সি-ট্রাক সেবা চালু করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার মূলে যেমন মিয়ানমার রয়েছে, তেমন এই সমস্যার সব সমাধানই রয়েছে মিয়ানমারে। বাংলাদেশ বরং এতে অহেতুক ও অযৌক্তিক চাপে রয়েছে। জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও, মানবতাবাদী সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি না করে মিয়ানমারে যেভাবে বংশ পরম্পরায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলছে, সেক্ষেত্রে মনোনিবেশ করা।
ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা। ফাইল ছবি
বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মিয়ানমারের এক লাখ নাগিরককে অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে এক হাজার ৬৪২ জনকে গত ৪ ডিসেম্বর ও এক হাজার ৮০৪ জনকে ২৯ ডিসেম্বর নেয়া হয়েছে ভাসানচরে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে রোহিঙ্গাদের বংশ পরম্পরায় নির্যাতনের কারণ অনুসন্ধানে মিয়ানমারে বিশেষ দল পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সবাইকে স্বীকার ও মনে রাখতে হবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফেরত যেতে হবে। বাংলাদেশ কেবল মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, প্রথমবার ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের বোঝাতে হয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে রোহিঙ্গারা নিজেরাই সেখানে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছে। এর পেছনে প্রথম ধাপে ভাসানচরে যাওয়া আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য ও পরামর্শ কাজ করেছে বলে মনে করে ঢাকা।