হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার অনুসারীরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ দাবি তুলেন শফীপন্থিরা। লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফী।আরও পড়ুন: আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে মামলা
তিনি বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে। যারা এই তদন্তের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, কেননা তদন্ত কাজে বাধাদান এবং এ জাতীয় হুমকি-ধামকি স্বাধীন ও স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামার জেরে হেফাজতের প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দুই দিন পর ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান ১০৪ বছর বয়সী শফী।
- আরও পড়ুন: আল্লামা শফীকে কি মেরে ফেলা হয়েছে
তাকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। আসামি করা হয়েছে সংগঠনটির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে।
বাদীর অভিযোগ, শফীকে গৃহবন্দি করে নির্যাতনের মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে থেকে খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
শফীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে বিচারিক তদন্তের জন্য সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তার অনুসারীরা। ছবি: নিউজবাংলা
শফীর মৃত্যুর সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় লিখিত বক্তব্যে- ‘জীবনের শেষ মুহূর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। রুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, ভাঙচূর করা হয়েছিল এসি-ফ্যানসহ আসবাবপত্র। চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছিল, মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলা হয়েছিল, হাসপাতালে যেতে বিলম্ব ঘটানো হয়েছিল।
“একশোঊর্ধ্ব এই বয়োবৃদ্ধ আলেমের নাতির গলায় ভাঙা কাচ ধরে বলা হয়েছিল, ‘এই বুইড়া, স্বাক্ষর কর, না হয় তোর নাতিকে হত্যা করব।’ এ কথা বলে জোর জবরদস্তিমূলক স্বাক্ষর নিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। এসব কিছুর পরও কি বলতে হবে, আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে?”
শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটির বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী। ২৩ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, যারা মামলা করেছেন তারা দালাল।আরও পড়ুন: বাবুনগরী দোষী হলে ফাঁসি চাই
শফীপন্থিরা বাবুনগরীকে হেফাজতের ‘তথাকথিত’ আমির উল্লেখ করে বলেছেন, শফীর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার করছেন তিনি।
শফীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদ্রাসার দায়দায়িত্ব ছিনিয়ে নিতে হেফাজতে ইসলামের নামে মামা-ভাগ্নের কাউন্সিল করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ কমিটি করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর আল্লামা শফীর মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়, যাতে তিনি মাদ্রাসা প্রধানের পদ ছাড়তে বাধ্য জন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘তথাকথিত এই কমিটিতে বাবুনগরীর পারিবারিক সদস্যই রয়েছে প্রায় ২২ জন। এ ছাড়া দুটি রাজনৈতিক দলের একটির ৩৬ জন, আরেকটির ২৪ জন সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদায়িত করে হেফাজতকে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে।’
বিগত দিনে যারা বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, সক্রিয় ছিলেন তাদের পাশ কাটিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ শফীপন্থিদের।আরও পড়ুন: ওরা আলেম হলে শফীকে হত্যা করত না
এই কমিটিকে অবৈধ উল্লেখ করা হয়ছে নিজেদেরকে হেফাজতের মূল ধারার বলে দাবি করেন তারা। জানানো হয়, অচিরেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিল আহ্বান করে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে চারটি দাবি জানায় শফীপন্থিরা।
১. বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
২. তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলা তদন্ত পূর্বক অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে।
৩. শফীর পরিবারের সদস্যদের ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
৪. শফীর রেখে যাওয়া সকল ধর্মীয় ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে তার বিরোধীদের অপসারণ করতে হবে।