দ্বিতীয় দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য প্রথম জাহাজটি চট্টগ্রাম ছেড়েছে।
চট্টগ্রামের বোট ক্লাব থেকে মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে রওনা হয় নৌবাহিনীর প্রথম জাহাজটি। আরও ছয়টি জাহাজ ছাড়ার কথা আছে।
সাতটি জাহাজের মধ্যে দুইটি বহন করবে রোহিঙ্গাদের মালামাল।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নৌবাহিনীর এলসিইউ-১ জাহাজে ৩৬৭ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচর পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১০৮ জন নারী, ৮৩ পুরুষ ও ১৭৬ শিশু রয়েছে।
এলএসইউ-২ জাহাজের ৩৬৩ জনের মধ্যে নারী ১০৩ জন, পুরুষ ৯০ ও শিশু ১৭২ জন।
এলএসইউ-৩ জাহাজের যাত্রী ৩৬১ জন। তাদের মধ্যে নারী ১০৫, পুরুষ ৯৬ ও শিশু ১৬০ জন।
এলএসইউ-৪ জাহাজের ৩৬২ জনের মধ্যে নারী ১০৩, পুরুষ ৯১ ও শিশু ১৬৮ জন। শেষ জাহাজ বিএনএস হাতিয়ায় আছে ১০৪ জন নারী, ৭৩ জন পুরুষ ও ১৭৪ জন শিশু।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে রোহিঙ্গা বহনকারী ৩০টি বাস পতেঙ্গার বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে পৌঁছায়। রাতে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয় ৪২৭ রোহিঙ্গা পরিবারকে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এর আগে থেকে ছিল আরও প্রায় চার লাখ। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে ৩৪টি ক্যাম্পে।
কক্সবাজার ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশ, ভূমিধসের শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে সেখানে ভিড় কমাতে উদ্যোগ নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
যদিও বেশ কিছু এনজিও ও বিদেশি সংস্থার কারণে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে রাজি করানো যাচ্ছিল না। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে এক জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধা দেখিয়ে আনার পর একটি অংশ সেখানে যেতে রাজি হয়।
এরপর যারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক শুধু তাদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
প্রথম দফায় ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ তাদের চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচর পৌঁছে দেয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেখানে দেড় হাজার এক তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। আরও আছে ১২০টি বহুতল ভবন, যা সাইক্লোন আশ্রয় কেন্দ্র ও অন্যান্য সময় অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ঘর। ছবি: নিউজবাংলা
সেখানে আবাসনের পাশাপাশি স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আছে সোলার পাওয়ার। জেনারেটরের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাও থাকবে।
এ ছাড়া সেখানে রোহিঙ্গাদের আয়বর্ধক নানা প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। খামারের কাজ, হাতের কাজ ছাড়াও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে আয় করতে পারবে তারা।