বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাগর তীরের প্রত্যন্ত গ্রামেও বিদ্যুতের আলো

  •    
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৮:৪২

ছয় মাস আগেও সন্ধ্যা নামলেই বরগুনার গ্রামগুলোয় অন্ধকার নেমে আসত। এখন সেগুলো সন্ধ্যার পর আলোকিত হয়ে ওঠে।

শীতের সকাল। কুয়াশা ভেদ করে কেবল আলো পৌঁছেছে লোকালয়ে। শীতকালীন সবজির ক্ষেতে পানি সেচ দিচ্ছেন নাসির উদ্দীন।

প্রায় দু একর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করেছেন তিনি। ক্ষেতের দু প্রান্তে দুটি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প বসিয়ে পুকুর থেকে পানি সেচ দিচ্ছেন।

বরগুনায় পায়রা নদীর তীর ঘেঁষে বুড়িরচর ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। শুধু নদী তীরের বাসিন্দাদের একাংশ জেলে। বাকি প্রায় সব পরিবারেরই আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। জেলা সদরের শীতকালীন সবজির দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় বুড়িরচর ইউনিয়নে।

নাসির উদ্দীন বলেন, কৃষিতে পরিবর্তন এসেছে গ্রামে বিদ্যুৎ আসার কারণে। ছয় মাস আগে এই এলাকায় বিদ্যুতায়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাবার পর তিনি এ বছর প্রায় দু একর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। এর আগে চাষাবাদ করতেন এক একরের কম জমিতে। বিদ্যুতের কারণে সেচ সুবিধা দেয়া সহজ হয়েছে।

গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে কিছুদূর হাঁটতেই সামনে কয়েকটি চায়ের দোকান। কয়েক জন কাঠের বেঞ্চে সারিবদ্ধভাবে বসে চা পান করছেন। বয়োজ্যেষ্ঠ আজহার আলী ফকির খুব আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। জায়গা করে দিলেন বসার। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত দোকান ঘর।

আজহার ফকির বলেন, ‘বাপের জম্মে এই গ্রামে কারেন্ট দেকমু চিন্তাও করি নাই। সুইচে টিপ দেই, বাতি জ্বইলা ওঠে।’

তিনি বলেন, বিদ্যুতের কারণে গ্রামের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন ঘরে ঘরে টিভি-ফ্রিজ। এখন আর শহরে যেতে হয় না। সন্তানেরা তাকে পানির পাম্প কিনে দেয়ায় তিনি এখন ট্যাপের পানিতে গোসল করতে পারছেন। টিউবওয়েল চেপে বা পুকুরে গোসল করতে হচ্ছে না।

পাশের গ্রামের বাসিন্দা আইউব আলী জানান, বিদ্যুৎ আসার পর তিনি বাড়িতে পরিত্যক্ত একটি পুকুরে মাচা দিয়ে দেশীয় মুরগী ও মাছের সমন্বিত খামার করেছেন। বিদ্যুৎ না থাকলে এটা করা যেত না।

আইউব আলীর মতো এই গ্রামের অনেকের বাড়িতেই এখন ছোট ছোট খামার গড়ে উঠেছে। কেউ সমন্বিত হাঁস ও মাছের খামার গড়েছেন, কেউ আবার গবাদি পশুর খামারও গড়েছেন।

গ্রামের ছোট ছোট বাজারগুলোতে এখন কলকারখানার কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যন্ত্রপাতি তৈরি ও মেরামতের ওয়ার্কশপ, গাছ কাটার করাতকল, ঘর বাড়িতে দরজা জানালার জন্য গ্রিলের কাজও করা হয় এসব এলাকায়। এ ছাড়া ধান ভাঙা, হলুচ মরিচ গুড়া করার জন্য এখন আর শহরে যেতে হয় না এলাকার মানুষদের।

সদর উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা, নলী নিশানবাড়িয়া নলটোনা। নদী তীরবর্তী এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ পেশায় জেলে। অন্ধকারে ডুবে থাকা জেলে পল্লিগুলোকে সন্ধ্যার পর দূর থেকে দেখে মনে হবে ছোট ছোট দ্বীপের মতো। এসব জেলে পল্লি এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত।

রায়ভোগ এলাকার জেলে আবদুল মজিদ ৪০ বছর ধরে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মজিদ বলেন, ‘মোগো এইহানে কারেন্ট আইবে এইয়া মোরো কোনোদিনই আশা হরিনায়, ঘরে কারেন্টের বাতি জ্বলবে দেইক্কা মরতে পারমু এমন হপ্পনেও (স্বপ্নেও) চিন্তা হরিনায়।’

জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা তালতলীর দক্ষিণতম প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত নিশানাবাড়িয়া ইউনিয়ন। গত ছয় মাসে এই ইউনিয়নের প্রায় ৭০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী বলেন, ‘এখানে বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি ও মাছ শিকার। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোতে অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। এলাকায় ফিরে অনেকেই এখন মৎস্য খামার, উন্নত কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন।’

ছ মাস আগেও সন্ধ্যা নামলেই এসব গ্রামে অন্ধকার নেমে আসত। এখন সন্ধ্যার পর সেগুলো আলোকিত হয়ে ওঠে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি পটুয়াখালীর তথ্য অনুযায়ী বরগুনা জেলার ৮৫ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। বাকি ১৫ ভাগে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ শেষ হবে। ফলে গোটা বরগুনা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসবে।

এ বিভাগের আরো খবর