বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটার ফিরল কেন্দ্রে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:১৫

‘সকাল ১০টা পর্যন্ত পুরুষদের উপস্থিত ছিল বেশি। ১০টার পর থেকে নারীদের উপস্থিতি বাড়ে। দুপুর আড়াইটার পর এত বড় লাইন হয় যে একেকটিতে ৬০ থেকে ৭০ জনের বেশি মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে ভোট দিতে। আমার ধারণা, উপস্থিতি যে পরিমাণ, তাতে চারটার মধ্যে ভোট শেষ করা নাও যেতে পারে।’

সাম্প্রতিক কিছু উপনির্বাচন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তুলনায় পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি অনেক বেশি।

প্রথম দফায় ২৪টি পৌরসভায় যে ৩১৯টি কেন্দ্রে ভোট চলছে, তার সিংহভাগ কেন্দ্রেই সকাল থেকে ভোটারের লাইন দেখা গেছে। ঢাকার বাইরে তীব্র শীতেও দলে দলে কেন্দ্রে এসেছে মানুষ।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা দেশ থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী ভোট খুব ভালো হচ্ছে। দুই একটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ভালো আছে। বিপুল সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতির তথ্য এসেছে আমাদের কাছে। ভোট শেষ হলে বলতে পারব কত শতাংশ পড়েছে। তবে আমাদের ধারণা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পড়বে।

হবিগঞ্জে ভোট হচ্ছে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার নয়টি কেন্দ্রে।

এর মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বড়চর বিদ্যালয়, সুদিয়াখলা কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন নিউজবাংলার প্রতিনিধি কাজল সরকার।

সুদিয়াখলা কেন্দ্রের ভোটার আফজল মিয়া বলেন, ‘উপজেলার বুটে (ভোট) মানুষ বুট দিতে আইছে না। এই বুটে মানুষে ভইরা গেছেগা। আটটা থাকাইকা বুট আরম্ব অইছে। কিন্তু মানুষ আইছে সাতটার থাইকাঅই। ইবিএম (ইভিএম) নিয়া আমরা টেনশন করছিলাম। কিন্তু দেখলাম ইবিএম দিয়া বুট দেওয়ন আরও সুজা।’

শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন এলাকার ব্যবসায়ী মো. সুলতান মিয়া বলেন, ‘বিগত সময়ে দেখেছি ভোটকেন্দ্রে গরু-ছাগল ঘুমাতে। কিন্তু এই পৌরসভা নির্বাচনে গরু-ছাগল ঘুমাবে দূরের কথা ভোটারেরই জায়গা হচ্ছে না।’

শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা সামছুন্নাহার বলেন, ‘বাড়িত অনেক কাম আছে। এল্লাইগা সকাল সকাল বুট দিতাম আইছি। ভোট দিয়া গিয়া রান্না-বান্না করমু।’

একই কেন্দ্রে আসা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বুট দিতাম না কেরে? পাঁচ বছরে একবার বোট দিতাম পারি, সব কাম পালাইয়া হইলেও বুট দিমু। কত বেইট্টাইন বুট দিত আইছে। লাইনে খাড়াইয়া বুট দেওয়নের একটা মজা আছে।’

স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিত বেড়েছে বলে মনে করেছেন নাগরিক কমিটি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন রুমি। তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন এবং জাতীয় বা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একটা বিশাল ব্যবধান আছে। এই নির্বাচনে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে না চাইলে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসে।’

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরের পর ভোটারের ভিড়

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী থাকার কারণে প্রতিটি ভোটারেরও কিন্তু নির্বাচনে নিজস্ব প্রার্থী রয়েছে। যে কারণে অন্য নির্বাচনের চেয়ে ভোট উপস্থিতি বেড়েছে।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটার উপস্থিতি খুবই ভালো। দুপুরের মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রেই ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। এছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার এক হাজার ৬০১ জন। এর মধ্যে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৮৯৪ জন ভোটার তাদের রায় দেন।

এই পৌরসভায় মোট কেন্দ্র নয়টি। নিউজবাংলার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জাহিদুজ্জামান গেছেন ছয়টি কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘যদি বাইরের লাইন দেখে বিবেচনা করি, তাহলে বলতে হবে অভাবনীয় ভোটার উপস্থিতি। নিকট অতীতে আমরা সংবাদকর্মীরা এমনটি দেখিনি।’

বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার জে এস ইউ ভোট কেন্দ্রে ভোটার এক হাজার ৯১৭ জন। বেলা দুইটা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৮৩৪টি।

তবে এই কেন্দ্রে ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। নইলে আরও ভোট পড়ত।

পৌরসভায় মোট কেন্দ্র নয়টি। নিউজবাংলার বরিশাল প্রতিনিধি তন্ময় তপু গেছেন তিনটি কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘সকালে ভোটার উপস্থিতি তেমন ছিল না। ১১টার পর ধীরে ধীরে ভোটার আসতে শুরু করে। আমরা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। একাধিক ব্যক্তি আমাদের বলেছেন, ইভিএমে ভোটে স্বচ্ছতা আছে বলে তাদের ধারণা। এ কারণে তারা কেন্দ্রে ফিরেছেন।’

মানিকগঞ্জে ভোট হচ্ছে ২৫টি কেন্দ্রে। নিউজবাংলার মানিকগঞ্জে প্রতিনিধি আজিজুল হাকিম গেছেন আটটি কেন্দ্রে।

তিনি বলেন, ‘সকালে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের লাইন ছিল। তবে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার দেখেছি দ্বিগুণ। এই লাইন থাকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রগুলোতে আর লাইন দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এত ভোটার উপস্থিতি মানিকগঞ্জে কেউ দেখেনি। ’

ভোটের সামগ্রিক পরিবেশ কেমন ছিল-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি কেন্দ্রের একাধিক ভোটার বলেছেন, ইভিএমে কোথায় কোথায় ভোট দিতে হবে, সেটা দেখিয়ে দেয়ার নামে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা নিজেরাই ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তবে বাকি কেন্দ্রগুলোকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, খান বাহাদূর আওলাদ হোসেন কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়েছে। এর বাইরে তেমন কোনো গেলযোগ নেই কোথাও।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ১০টা কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আরও বেশি।

নিউজবাংলার জেলা প্রতিনিধি কুরবার আলী গেছেন ছয়টি কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টা পর্যন্ত পুরুষদের উপস্থিত ছিল বেশি। ১০টার পর থেকে নারীদের উপস্থিতি বাড়ে। দুপুর আড়াইটার পর এত বড় লাইন হয় যে একেকটিতে ৬০ থেকে ৭০ জনের বেশি মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে ভোট দিতে। আমার ধারণা, উপস্থিতি যে পরিমাণ, তাতে চারটার মধ্যে ভোট শেষ করা নাও যেতে পারে।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান প্রামাণিক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

অভিযোগও আছে

দুপুরের মধ্যে ঢাকার ধামরাই, পাবনার চাটমোহর ও খুলনার চালনায় কারচুপির অভিযোগ এনে তিন জন প্রার্থী অবশ্য ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য এলাকাগুলোতে প্রার্থীরা বড় ধরনের কোনো অভিযোগ তোলেননি।

২৪টি পৌরসভায় মোট ভোটার ছয় লাখ ২৪ হাজার ৮০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ তিন লাখ ৭ হাজার ৩৭ জন এবং নারী তিন লাখ ১৭ হাজার ৭৭০ জন।

চলতি বছর বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটের নিম্নহার নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।

গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়ে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

১৮ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনে ভোট পড়ে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

১৩ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনে ভোট পড়ে ১৪.১৮ শতাংশ।

নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলোর নানা অভিযোগের পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতির নিম্নহার নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। আর এবার পৌরসভা নির্বাচনের আগে ৪২ জন নাগরিকের এক যৌথ বিবৃতিতে কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টিও উঠে আসে।

নাগরিকরা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতেও রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পৌরসভা নির্বাচনে কী হয়, তা নিয়ে দৃষ্টি ছিল রাজনৈতিক মহলে।

এই পৌর নির্বাচনে প্রায় সব এলাকাতেই প্রচার চলেছে ব্যাপক। কিছু কিছু এলাকায় কয়েক জন প্রার্থী প্রচারে নিষ্ক্রিয় থাকলেও সিংহভাগ এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন।

মেয়রদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সকাল থেকে রাত অবধি চালিয়েছেন গণসংযোগ।

৯৩ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট এক হাজার ১৬০ জন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা কেন্দ্রে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন ভোটারদের।

এ বিভাগের আরো খবর