করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে কবে আসছে এ টিকা?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকা কেনার কর্মকাণ্ডে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। এখনও শুধু যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকার ওপরই ভরসা সরকারের। এ টিকা এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।
অনুমোদন পেতে দেরি হলে টিকার জোগান কীভাবে হবে, সে প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা পাওয়ার জন্যে ধরনা দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উন্নত বিশ্বে ইতিমধ্যে অনুমোদন পাওয়া এ দুটি টিকার জন্য আগ্রহপত্র জমা দিলেও দেশে এ দুটি টিকা প্রয়োগের মতো অবকাঠামো নেই। তাই এ দুই টিকা নিয়ে এখন ভাবছে না সরকার।
চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া অক্সফোর্ডের টিকা ও বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) ঘিরেই সব প্রস্তুতি সরকারের। এ অঞ্চলে অক্সফোর্ডের টিকার প্রস্তুতকারক ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এবং এটির সরবরাহকারী বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি করেছে সরকার। দেয়া হয়েছে ক্রয় আদেশ।
এখান থেকে আগামী ছয় মাসে তিন কোটি টিকা পাওয়া যাবে। এই টিকা জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে আসা শুরু হতে পারে। এ ছাড়া টিকা নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির কাছ থেকে পৌনে সাত কোটি টিকা আসবে জুনের মধ্যে। এই টিকা আসবে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা সরবরাহে তৈরি করা আন্তর্জাতিক উদ্যোগে কোভেক্সের মাধ্যমে।
এ দুই উৎস থেকে এখন পর্যন্ত ১০ কোটি টিকার সংস্থান হয়েছে, যা পাবে পাঁচ কোটি মানুষ। কেননা একেক জনকে টিকা দিতে হবে দুটি করে। ফলে ১৭ কোটি মানুষের দেশে বাকি ১২ কোটি মানুষের টিকা কীভাবে আসবে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
আবার তিন কোটি টিকা এলে কারা আগে টিকা পাবে, সেই বিষয়ে নীতিমালাও এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে টিকার ব্যবস্থা না করতে পারলে টিকা আসবে অবৈধ পথে। এমনকি বণ্টনব্যবস্থা দুর্বল হলে করোনা টিকা পেতে বঞ্চিত হবে দরিদ্ররা।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব নিউজবাংলাকে বলেন, সঠিক সময়ে টিকা না এলে টিকা নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। ক্ষমতাবানরা প্রথমে টিকা নিশ্চিত করতে চাইবেন। এ ক্ষেত্রে গরিব ও দরিদ্র মানুষ টিকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
টিকা দেশে কবে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সফোর্ডের টিকা আসবে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। এ টিকা যখনই অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবে, তখনই বাংলাদেশ সে ভ্যাকসিন পাবে। টিকা পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘টিকা দেওয়ার জন্য যে স্থানীয় প্রস্তুতি, সেটাও আমরা যথাযথভাবে নিয়েছি। টিকার তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য কিছু বাড়তি কোল্ড বক্স লাগবে, সেটার ব্যবস্থাও হয়ে গেছে।’
অক্সফোর্ড ছাড়া অন্য টিকা নিয়ে কেন ভাবা হচ্ছে না, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত অক্সফোর্ড নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। যদি অন্য কেউ টিকা নিয়ে আসে ডব্লিউএইচওর অনুমোদনসহ তাহলে সরকার কাউকে মানা করবে না। তবে তাকে ডব্লিউএইচওর প্রটোকল মানতে হবে।’
তিনি জানান, আগামী জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অক্সফোর্ডের তিন কোটি টিকা আসার পর আরও ছয় কোটি আসবে বছরের মাঝামাঝি।
সরকারের টিকাবিষয়ক কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা আসা নির্ভর করছে অনুমোদনের ওপর। অনুমোদন হলে আমরা জানতে পারব টিকা কবে পাব। আমাদের জায়াগা থেকে সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। টিকা প্রয়োগ, সংরক্ষণ এবং বিতরণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে। দুই-এক দিনের মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন হবে বলে আশা করছি।’