ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ভবন ভেঙে নতুন ভবন করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বেশ কিছু শিক্ষক আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু টিএসসি ভাঙার কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর ও টিএসসি কর্তৃপক্ষ।
টিএসসির উপদেষ্টা ড. সৌমিত্র শেখর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউই এখনও কোনো অফিশিয়াল কাগজ পাইনি, যেখানে টিএসসির নতুন ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এমনকি আমাদের মৌখিকভাবেও কিছু জানানো হয়নি।’
তিনি বলেন, তারা বরং টিএসসির অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দোতলায় মুনীর চৌধুরী মিলনায়তন সংস্কারের কাজ চলছে। টিএসসির ভেতরে থাকা গ্রিক স্থাপনার সংস্কার কাজ কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে।
তিনি বললেন, টিএসসি ভাঙা হলে এসব সংস্কার কাজ হতো না।
টিএসসি ভবন ভাঙার বিষয়টি আলোচনায় আসে গত ২ সেপ্টেম্বর। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে বলেন, টিএসসি ভবনটিকে তিনি আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের স্বপক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী ও উপাচার্যের এ বক্তব্যের পর টিএসসি ভবন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়।
এ বিষয়ে টিএসসির উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি মেগা প্রজেক্ট। এতে অনেক অবকাঠামোগত পরিবর্তনও আসতে পারে। তবে এখনও এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’
এদিকে গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টিএসসির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উপাচার্য কিংবা আমাদের প্রশাসনিক কারো কাছে লিখিত কিছু আসেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিএসসির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন। তাই আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছি। তারা জানানোর পর আমরা সেইগুলোকে বিবেচনা করব, যদি প্রজেক্টটি বাস্তবায়নের দিকে যায়।’
টিএসসিসহ শাহবাগের সংস্কার প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বোস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে ওই এলাকায় ডিজিটাল সার্ভের কাজ করছি। এই সার্ভে শেষ হলে আমরা সব বিভাগ মিলে বসব। তখন পুরোপুরি বোঝা যাবে, কোনো কিছু ভাঙতে হবে কি না। এখনও এ রকম কোনো কিছুই ভাবা হয়নি। এমনকি প্রকল্পের কোনো ধরনের ডিজাইনও হয়নি।’
এ আলোচনা শুরু হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে মতামত জানান। তাদের এক জন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ববর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্য ধারণ করে এই টিএসসি। রক্ষণাবেক্ষণের বদলে এটিকে ভেঙে এখন বহুতল ভবন নির্মাণের আয়োজন চলছে। শুধু শুধু অর্থনীতিবিদদেরই সমালোচনা করা হয় যে, তারা সবকিছুর বাজারদর বোঝে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, এরা কোনো কিছুর প্রকৃত মূল্য বোঝে না।’
ষাটের দশকে নির্মিত টিএসসির দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটির নকশা করেছিলেন গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডেস। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের আমলে ভবনটির নির্মাণ শেষ হয়।
এই স্থপতি টিএসসির পাশাপাশি ঢাকায় হোম ইকোনমিকস কলেজ, কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিসহ কিছু স্থাপনার নকশা করেছেন। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের নকশা তৈরি করা হয় তার নেতৃত্বেই।