দেশের কারাগারগুলোকে সব ধরনের মাদক সরবরাহ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াসহ আট দফা নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট।
ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের সই না থাকলেও এক আসামির জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি সামনে এলে গত ১৯ অক্টোবর বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ যে আদেশ দিয়েছিলেন তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রোববার প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে কারাগারগুলোকে আট দফা নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, তিন মাস পর পর আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দিতে হবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাব মহাপরিচালক, আইজি প্রিজন, সব জেলার ও ডেপুটি জেলারের কাছে আদেশটি পাঠাতে বলা হয়েছে।
রোববার আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন (মানিক) ও সহকারী অ্যাটর্নি মাহজাবিন রাব্বানী দীপা।
ডেপুটি জেলারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ আলী আজম, আসামি পক্ষে রুহুল কুদ্দুস কাজল ও শামীমা আক্তার।
আট দফা নির্দেশনা হলো
এক. দর্শনার্থীদের কঠোরভাবে তল্লাশি করতে হবে ও দর্শনার্থী কারও কাছে কোনো মাদকদ্রব্য, অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
দুই. বিচারাধীন মামলায় বা দণ্ডিত কারাবন্দিদের নাম, ঠিকানা, মামলার নম্বর, ধারা, কোন আদালতে বিচারাধীন বা কোন আদালতের রায়ে কী দণ্ড হয়েছে, কারা মহাপরিদর্শক, জেলার, সহকারী জেলারকে সেসব তথ্য রেজিস্ট্রারে রাখতে হবে।
তিন. কারা কর্তৃপক্ষকে দণ্ডিত বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির কারাগারে আসা ও বের হওয়ার তারিখ রেজিস্ট্রারে লিখে রাখতে হবে।
চার. সঠিকভাবে যাচাই করার পর কারা কর্তৃপক্ষ বা কারা কর্মকর্তাকে দণ্ডিত ব্যক্তি বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির ওকালতনামায় সই বা সিল দিতে হবে।
পাঁচ. সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ অথবা কারা কর্মকর্তা ওকালতনামার যেখানে সই ও সিল দেবেন তার পাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পুরো নাম, কারাগারের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল ফোন নম্বর লিখতে হবে।
ছয়. কোনো অশোভন, অযাচিত পরিবেশ-পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সে জন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কারাগার ও কারা প্রাঙ্গণের শান্তি, নিরাপত্তা বজায় রাখতে কারা কর্তৃপক্ষকে সবসময় সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
সাত. কারাগারের ভেতরে সব ধরনের মাদকের সরবরাহ বন্ধে কারা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে।
আট. কারা আইন ১৮৯৪, কারাবন্দি আইন ১৯০০ এবং বাংলাদেশ জেলকোডসহ সংশ্লিষ্ট সব আইনের বিধান কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে মানতে হবে।
গত ১৫ জুন হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ থেকে জামিন পান ১১ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির দুই মামলার আসামি জিওলোজাইজ সার্ভে করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান। তখন জামিন হলফনামা আকারে নিয়মিত করতে বলা হয়।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট হলফনামা শাখা দেখতে পায়, ওই আসামির দুটি মামলার একটিতে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর নেই।