রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সাইকেল লেনে চায়ের দোকানসহ যেসব স্থাপনা বসানো হয়েছিল, উচ্ছেদ হয়েছে সবই। পুলিশ বক্সে হাত দিলেন না কেউ।
সাংবাদিক ডেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এ রকম অসম্পূর্ণ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রশ্নের মুখে কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশ বক্স নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে পরে।
রোববার এই অভিযানের কথা আগের দিন জানিয়ে সাংবাদিক পাঠাতে বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে সোয়া ১১টার দিকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান।
নগরীর সবচেয়ে চওড়া সড়কের এক পাশে সাইকেল চলাচলের জন্য আলাদা লেন করে তাতে রঙ করে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু সাইকেলচালকদের দুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই লেনে বসানো নানা স্থাপনা।
গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা তো ছিলই। আরও সেখানে ছিল চায়ের দোকান, খাবারের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ি। টেলিফোন শিল্প সংস্থা টেসিসের সামনে একটি বক্স বসায় পুলিশ, যে কারণে সাইকেল চালকদের পক্ষে এই লেন ধরে চলা ছিল অসম্ভব।
অভিযান শুরুর পর হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় চায়ের দোকান, বুলডোজার দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়, সরানো হয় খাবারের ভ্যানগুলো। দোকানিরা সেখানে ছিলেন না কেউ, থাকলেও সামনে আসেননি।
উচ্ছেদ অভিযানে রেকার দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। করা হয়েছে জরিমানা। ছবি: নিউজবাংলা
একটি প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানে যান অভিযানকারী দল। তাদের দেখে গাড়ি ছেড়ে চলে যান চালক। পরে রেকার ডেকে গাড়িটি তুলে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এই পর্যায়ে ছুটে আসেন চালক। অনুনয় বিনয় করতে থাকেন। পরে নূর আলম নামে ওই চালককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি টাকা পরিশোধ করে গাড়ি নিয়ে চলে যান।
এর বাইরে রেকার ভাড়া হিসেবে আদায় করা হয় আরও দেড় হাজার টাকা।
এ সময় মাস্ক না পরায় দুই জনকে একশ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উচ্ছেদ অভিযানে কর্মকর্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
এতসব ব্যবস্থা নিলেন পুলিশ বক্স কেন উচ্ছেদ হলো না- জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশ বিভাগ আমাদের সরকারের অংশ। পুলিশ বিভাগের সঙ্গে নগর ভবনের পারস্পরিক আলোচনা ও যোগাযোগের মাধ্যমে সেটি সরাব। আপাতত আমরা অবৈধ দখল কার পার্কিং মুক্ত করতে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বক্সের বিষয়টি ইতোমধ্যে নগরভবনে জানানো হয়েছে। পুলিশ বিভাগের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ শুরু হবে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ বক্সেটি উঠে যাবে।’
এই অভিযানের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব শহর গড়ার লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে বাইসাইকেল লেন করা হয়েছে। যারা সাইকেল চালান, তারা যেন নিরাপদে চালাতে পারেন, এ জন্য এ অভিযান।’
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উচ্ছেদ অভিযানে বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ করা হয় অবৈধ স্থাপনা। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকার প্রথম সাইকেল লেন করা হয়েছে আগারগাঁও এলাকায়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে করা হয় দ্বিতীয় লেন।
ফুটপাতে দোকানিদের কারণে পাশেই খামারবাড়ি এলাকা হাঁটার মতো জায়গা নেই। সেখানে কেন অভিযান চালানো হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের মুখেও পড়েন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ। জবাবে তিনি বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতির কারণে অভিযান অনেক দিন বন্ধ ছিল। এগুলো আবার শুরু হয়েছে। আমরা সেখানেও অভিযান পরিচালনা করব।’