রাজনীতি করলে কারাগারে যেতে হয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজের কারা জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, কেবল অপরাধ করলেই যে জেলে যায় তা না। জনগণের জন্য কাজ করলেও বন্দি হতে হয়।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব কাছাকাছিই থাকে। যেটা খুবই স্বাভাবিক। ২০০৭ এ যেটা হয়েছে, ক্ষমতা ছাড়াও কিন্তু সবার আগে আমাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা হবে।’
রোববার বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০টি ফায়ার স্টেশন, ছয়টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কেরাণীগঞ্জে নারীদের কেন্দ্রীয় কারাগার এবং একটি এলপিজি স্টেশনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি রাজনীতিবিদদের কারা জীবনের কথা তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধুর বারবার জেল খাটার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু অপরাধ করলেই যে জেলে যায় তা না। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালে যখন আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল তখন জাতির পিতা যে প্রতিবাদ করেছিলেন সে প্রতিবাদের কারণে কারাগারে যেতে শুরু করেন। তারপর তার জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত মানবেতরভাবে।
‘জাতির পিতা কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে কারাগার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারের সঙ্গে সব সময় আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। ছোটবেলা থেকেই কারাগারে যাই, সেখানকার ভালো-মন্দ অনেক কিছু জানারও সুযোগ হয়।’
সরকার কারাগারগুলোর পরিস্থিতি উন্নত করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়। তাদের মন মানসিকতা পরিবর্তন করা, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের কিছু শিক্ষা দেয়া এবং যাতে তারা বের হয়ে ভবিষ্যতে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কারাগারে এই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
বন্দিদের প্রশিক্ষণ ও সংশোধনে জোর
রাজবন্দি ছাড়া যারা অপরাধ করে যায় তাদেরকে নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে সংশোধন করার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ট্রেনিং দিয়ে তারা যাতে যথাযথ মানুষ হয় সেভাবে আমরা ছেড়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায়, তখন তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। অপরাধ করে অপরাধী। কিন্তু তারপরেও তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। এতগুলো বেকার বসে থাকবে কেন? সেই জন্য সেখানে তাদের ট্রেনিং করানো, তাদের দিয়ে কিছু পণ্য উৎপাদন করা, সেই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
‘এই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার পর যে লাভ আসে তার ৫০ ভাগ যে উৎপাদন করেছে সে পায়। এই টাকা সে জমাও করতে পারে কিংবা পরিবারকেও পাঠাতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারাগারে কতগুলো পরিবর্তন এনেছি। আমাদের কারারক্ষীদের কোনো ট্রেনিং ছিল না, তাদের নিরাপত্তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি তাদের থাকারও ভালো ব্যবস্থা ছিল না। নতুন কারাগারে সেই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছে। আমরা কারাগারগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীকে কেবল বন্দি করা নয়। তার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে যাতে করে সে আবার ছাড়া পেয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে।’
নিরাপত্তারক্ষীদের পোশাক, আবাসন ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
ভার্চুয়াল আদালতে জোর
করোনার বিস্তার ঠেকাতে পর্যায়ক্রমে সব জেলা কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত স্থাপনের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘করোনায় আদালত চালানো মুশকিল তাই এই ভার্চুয়াল কোর্ট। জেলা কারাগারগুলোতেও যেন ভার্চুয়াল কোর্ট হয় আমরা সে ব্যবস্থা করছি।
‘আদালতের কার্যক্রম আধুনিক ও ডিজিটাল করতে সব নথি অনলাইনে যুক্ত করা হচ্ছে। সব আইন, কজলিস্টও অনলাইনে করা হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালতের কাজ আরও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা হচ্ছে।’
বাংলায় রায় লেখায় তাগিদ
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদালতের রায়গুলো সাধারণত ইংরেজিতে লেখা হয়। সেগুলো বাংলায় করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ এদেশের অনেক মানুষই ইংরেজিতে লেখা রায় বুঝতে পারেন না। উকিল যা বোঝায় তিনি তাই বোঝেন। সকলের সুবিধার জন্য এটা করা হচ্ছে।’
দেশের প্রতিটি উপজেলা ও দুর্গম এলাকায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার বিষয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘প্রতি বছর আগুনের কারণে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের চিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা আগে ছিল না। আমরা ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিট সংযোজন করেছি।’
‘এখন ৬৭টির নির্মাণ কাজ চলমান। আমরা অগ্নিনির্বাপনে আধুনিক অনেক যন্ত্রও সংযোজন করেছি।’
রাজধানী সহ সারা দেশেই স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ চলমান বলেও জানান সরকার প্রধান।