বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশি এয়ারলাইন্সের ‘অ‌ক্সিজেন’ অভ্যন্তরীণ রুট

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৪:২৭

করোনার সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোই দেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন এভিয়েশন অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এটিএম নজরুল ইসলাম।

এ বছর এভিয়েশন খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস মহামারি। বছরের শুরুতেই করোনা সংক্রমণে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ছিল সব ধরনের উড়োজাহাজ চলাচল। তারপর যাত্রী পরিবহন শুরু হলেও তা ছিল নিতান্তই কম। তবে অক্টোবরের পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সামনে এনেছে নতুন সংকট।

এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ রুটেই ভরসা রাখছে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো।

করোনার মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র চার মাসেই ১ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা আয় বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আয়বঞ্চিত হয় ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার। অর্থাৎ সক্ষমতা থাকার পরও করোনার কারণে ৮ মাসে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আয় করতে পারেনি বিমান।

এ কারণে এয়ারলাইন্সগুলোর দাবির মুখে তাদের সব ধরনের অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুফ করেছে সরকার।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিমান লাভ করেছিল ৪৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আমাদের অপারেশনাল লস হয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা।

‘অর্থাৎ ১৪ কোটি টাকা পুরো অর্থবছরে আমাদের লস ছিল। ট্যাক্স যোগ করার পর এটি হয়ে যায় ৮০ কোটি টাকায়। এ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের অপারেশনাল লস হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকা।’

মোকাব্বির জানান, করোনার কারণে রুট সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তাও বাস্তবায়ন করা যায়নি।

‘বিমানের অসুবিধা যা হয়েছে তা করোনার কারণেই। করোনা না আসলে হয়তো লাভের ধারা বহাল থাকত। আমরা একটি পজিটিভ মোমেন্টামে ছিলাম।’

দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা বলছে, করোনার কারণে জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকা আয়বঞ্চিত হয়েছে তারা।

প্রতিষ্ঠানের বিপণন ও জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কোভিডের আগে অভ্যন্তরীণে প্রতিদিন প্রায় ৬০টি আর আন্তর্জাতিকে সপ্তাহে ৯০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণের ফ্লাইট অর্ধেকই কমে যায়।

‘তবে গত দুই মাসে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। আমরা এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৫৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছি। আর আন্তর্জাতিকে এখন সপ্তাহে ৩৮টির মতো ফ্লাইট চালানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ফ্লাইট কমে গেলেও আমাদের উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কিংবা গ্রাউন্ড ফ্যাসিলিটি কিন্তু আগের মতোই আছে। অর্থাৎ আয় কমলেও ব্যয় সংকোচনের আসলে খুব একটা সুযোগ নেই।

‘আমরা টিকে থাকতে স্বল্প সময়ের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমরা কাজ করছি। কিন্তু প্রতি সপ্তাহেই আসলে সেটা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কারণ সামনে কী আসে তা আমরা কেউই জানি না।’

কামরুল জানান, করোনা শুরুর সময়ে যাত্রীরা আকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে আস্থাহীনতার মুখে পড়েছিলেন, সে পরিস্থিতি এখন কিছুটা ভালো।

‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নতুন বছরে হয়তো আমরা কিছুটা স্বস্তির জায়গায় থাকতে পারব’, বলেন কামরুল ইসলাম।

করোনার সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোই দেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখে বলে মনে করছেন এভিয়েশন অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এটিএম নজরুল ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বছরের শুরুতেই কোভিডের কারণে সারা বিশ্বে এভিয়েশন খাত ভেঙে পড়ে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তারপরও বছরের শেষে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা তাও শেষ করে দিচ্ছে। এখন ফেব্রুয়ারি মাসের আগে আসলে কিছুই বলা যাবে না, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।

‘এ সময়ে আমরা দেখেছি, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোই দেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। এটা অব্যাহত থাকলে হয়তো দেশি এয়ারলাইন্সগুলো টিকে থাকতে পারবে।’

তার হিসাবে, করোনার মধ্যে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো আন্তর্জাতিক রুটে ৬০ ভাগেরও বেশি সক্ষমতা হারিয়েছে। একই অবস্থা হেলিকপ্টার সার্ভিসগুলোরও। তারা সক্ষমতা হারিয়েছে ৫৫ ভাগ পর্যন্ত।

তিনি বলেন, ‘যেসব স্থানে বিমানবন্দর নেই, সেসব স্থানে জরুরি ভ্রমণের প্রয়োজনে হেলিকপ্টার একটি জনপ্রিয় বাহন হতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন স্থানে হেলিকপ্টার চলাচল উপযোগী অবকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।’

কঠিন সময়ে দেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখতে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে রিফুয়েলিং সুবিধা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন নজরুল। পাশাপাশি এয়ারলাইন্সগুলোতে প্রথাগত ফ্লাইট নেটওয়ার্কের বাইরে অন্য বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে ফ্লাইট শুরুর পরামর্শ দেন তিনি।

‘অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে রিফুয়েলিং ব্যবস্থা করা গেলে যেকোনো বিমানবন্দর থেকে অন্য বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালানো যাবে। এটি হলে এখন যেমন বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ যাত্রী দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করছেন সেটি বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখে পৌছাবে’, মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম।

নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি কার্গো ও চার্টার্ড ফ্লাইটে জোর দিতে এয়ারলাইন্সগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর