রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নতুন যুক্ত হওয়া উড়োজাহাজ ‘ধ্রুবতারা’র সঙ্গে ছবি তুলতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে ভার্চুয়ালি উড়োজাহাজটির উদ্বোধন করার সময় অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায়ও দুঃখ প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ‘খুব দুঃখ লাগছে যেতে পারছি না। একটু ছবিও তুলতে পারছি না।’
করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই চলাচল সীমিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও অনেক কার্যক্রম গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সারছেন তিনি। এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করতে শোনা গেছে তাকে।
বিমানের নতুন উদ্বোধন হওয়া ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটির নাম প্রধানমন্ত্রীই রেখেছেন ‘ধ্রুবতারা’। আগামী বছরের শুরুতে একই মডেলের আরও দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হবে বিমানের বহরে।
আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি হলে তা দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নতুন এ উড়োজাহাজটি দিয়ে অভ্যন্তরীণের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। আশেপাশের বিভিন্ন দেশে ভালো যোগাযোগ হলে ব্যবসা বাণিজ্যেরও উন্নতি হবে।
‘ধ্রুবতারা আমাদের দিক নির্দেশনা দেয়। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিকে মাথায় রেখেই উড়োজাহাজটির নাম ধ্রুবতারা দেয়া হয়েছে। এর আগেও যে উড়োজাহাজগুলো এসেছে সেগুলোর নামকরণ আমিই করেছি। আর এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছে আমার বোন শেখ রেহানা।’
প্রতিটি বিমানই বিদেশে দেশের বার্তা বহন করে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী, ‘আমি নিজেও যখন সরকারে ছিলাম না বিমানেই ভ্রমণ করতে পছন্দ করতাম। আমাদের অনেক প্রবাসী আছেন যারা সব সময় দেশের প্লেনেই চড়তে চান।
‘কিন্তু সে সময় বিমানের অনেক দুরাবস্থা ছিল। আমরা সরকার গঠন করার পর অনেকগুলো নতুন উড়োজাহাজ কিনেছি। এর সবগুলোই সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নতমানের।’
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিমানখাতে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা ছিয়ানব্বই সালের আগের ঢাকা বিমানবন্দরের ছবি দেখেন, কিংবা অনেকরই হয়তো অভিজ্ঞতাও আছে, একটু মনে করলেই দেখবেন তখন কী অবস্থা ছিল। আমরা সরকার গঠনের পর এর আমুল পরিবর্তন করেছি।’
দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোতেও আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলে জানালেন সরকার প্রধান।
‘সরকার গঠনের পরই সিলেট ও চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করেছি। এখন কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করতে কাজ চলছে। এ ছাড়াও সৈয়দপুর, সিলেট ও রাজশাহী বিমানবন্দরেও উন্নয়ন কাজ চলছে। আমাদের লক্ষ্য যোগাযোগের সার্বিক উন্নয়ন করা। আমরা আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও বাড়াতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ঘুরে ফিরে আসে করোনা মহামারি প্রসঙ্গও। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড এসে আমাদের সব উলটপালট করে দিল। এত সুন্দর উড়োজাহাজ কিনলাম। কিন্তু সারা বিশ্বেই এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সারা বিশ্বেই এ সমস্যাটা হচ্ছে। কবে মুক্তি কেউ জানে না। তারপরেও ধ্রুবতারা নিয়ে আসা, অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ।’
এজন্য সংশ্লিষ্টদেরও ধন্যবাদ দেন সরকার প্রধান।
বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে কেনা তিনটি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজের প্রথমটিই হচ্ছে ‘ধ্রুবতারা’।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, কানাডার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ডের তৈরি এই উড়োজাহাজটি পরিবেশবান্ধব এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ।
এটি নিয়ে বিমান বহরের বর্তমান উড়োজাহাজ সংখ্যা দাঁড়াল ১৯টি। এর মধ্য চারটি বোয়িং ৭৭৭, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং তিনটি ড্যাশ ৮ মডেলের উড়োজাহাজ।
এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন তৈরি করা ২০টি ফায়ার স্টেশন, ছয়টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং একটি এলপিজি স্টেশনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে সকালে ফেনী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদারকে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।