রাজধানীর দুই এলাকায় ঘটা করে চালু হওয়া বিআরটিসির দুইটি চক্রাকার বাস সেবা বন্ধ হয়ে গেছে নীরবে।
অথচ ধানমন্ডি ও উত্তরায় এই সেবা শুরুর হওয়ার পর আরও বিভিন্ন রুটে একই ধরনের সেবা চালুর ঘোষণা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন কোম্পানিটির।
ধানমন্ডি রুটের বাস বন্ধ হয় মার্চে করোনা আসার পর। আর উত্তরা রুটেরটি বন্ধ হয় আগেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে ধানমন্ডি রুটে সার্ভিস চালু হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিআরটিসি।
উত্তরা রুটে পুনর্বিন্যাস করে আবার চালুর কথা বলছে সংস্থাটি।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ রাজধানীর আজিমপুর-নিউমার্কেট-ধানমন্ডি ও ২৭ মে বিমানবন্দর থেকে প্রগতি সরণি রুটে চক্রাকার বাস সেবার উদ্বোধন হয়।
রুট দুটি বন্ধ কেন জানতে চাইলে বিআরটিসি চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানমন্ডি এলাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীল। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। এ কারণে অনেক ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে আমি মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।
‘ক্ষতি একটা বড় ফ্যাক্টর। এসি বাস হওয়ায় যখন স্বাভাবিক সময় ছিল তখনই লাভ হতো কম। এখন তো পুরোপুরি লোকসান।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে এই রুট আবার চালুর আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আর ওই রুটে আমরা পলাশী পর্যন্ত না গিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে চাই।’
উত্তরা রুটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে প্রচুর লেগুনা ও রিকশা থাকে। এ কারণে গাড়ি চালানোই মুশকিল ছিল। আর আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসছিল না।’
বিআরটিসির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) আমজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই বাসগুলো এখন অন্য রুটে চলাফেরা করে।’
বিআরটিসির এই চক্রাকার বাসের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমানা নাসরিন। তিনি থাকেন ধানমন্ডির শংকরে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওই বাস সার্ভিসটি নিয়ম মেনে চলাচল করত। টিকিট সিস্টেম ও লাইনে দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেওয়ার কারণে বাসে উঠতে কোনো সমস্যা ছিল না। এসব কারণে ওই বাসেই যাতায়াত করতাম।’
উত্তরা রুটের যাত্রী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে শারমিন সামাদ সোমা বলেন, ‘আমার অফিস উত্তরায় আর বাসা বনশ্রীতে। প্রায় ওই বাসে যেতাম। নিয়ম মেনে যাত্রী উঠানো হতো বলে ওই গাড়িগুলোতে হুড়োহুড়িও কম হতো।’
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে মালঞ্চ বাস সার্ভিসের সুপারভাইজার বিপ্লব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে সাধারণ গাড়ি নিয়ে আমাগো পোষায় না। আর এইগুলা তো লাগজারিয়াস গাড়ি। সবাই তো লাভের লাইগা গাড়ি চালায়। লাভই যদি না হয় তবে কেমনে হইব?’
তিনি বলেন, ‘গাড়ি সরকারি হইলেও পাবলিক ওইটা নিয়া আইছে ব্যবসা করণের জন্য। ধরেন গাড়ি সরকার থেকে আমি নিলাম কন্ট্রাক্টে, এমন আরকি। আইনা দেখল যে পোষাইতে পারে না। তখন কী করবেন?’
বেসরকারি পরিবহনের এই কর্মী নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ‘গাড়িটার সার্ভিস ভালো ছিল। কিন্তু করোনার কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা এখন এমতেই খারাপ। মানুষ এখন পাঁচ টাকা বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে। আমরা এইহান থেইক্কা (মোহাম্মদপুর) শংকর পর্যন্ত ভাড়া পাইতাম। এখন মানুষ শংকর পর্যন্ত মানুষ হাইট্যাই চলে যায়। এ কারণে বিআরটিসি না, আরেকটা বেসরকারি এসি বাস সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে।’
জিগাতলা বাস স্ট্যান্ডের মিডলাইন বাস সার্ভিসের লাইনম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘স্কুল-কলেজের অনেকেই তো এখন যাতায়াত করে না। এ কারণে আমাদের ব্যবসাও একটু মন্দা। আর এসি বাস সার্ভিস হওয়ায় উনাদের ব্যবসা তো আরও কঠিন, বুঝতেই পারছেন।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় বিআরটিসি ওই এসি বাসগুলো রাতে রাখার ব্যবস্থা ছিল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ‘দেশ মাটি বাস সার্ভিস’ নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির বেশ কিছু বাস।
সেখানে থাকেন জামাল হোসেন নামের এক জন।
তিনি বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ হইছে ৬-৭ মাস হইব। ম্যানেজার আমারে কইছে, রোড বন্ধ আছিল, এর পর যাত্রী হয় না। এ কারণে বন্ধ কইরা দিছে।’
বিমানবন্দর প্রগতি সরণি রুটে দিয়ে চলা গ্রিন ঢাকা পরিবহনের লাইনম্যান তাবে তাবাই বলেন, ‘আমাদের পাশেই উনারা বসত। করোনার লকডাউনের পর থেকে আর দেখা যায় না।’